বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সাক্ষাৎকার

কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর জন্ম ৩১ ডিসেম্বর ১৯৪৮, ফরিদপুর। ষাটের দশকের একজন বিশিষ্ট লেখক তিনি। একাধারে কবি ও ঔপন্যাসিক। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৩২টি। উপন্যাস ২টি। এছাড়াও লিখেছেন ২টি প্রবন্ধ, ১টি স্মৃতিকথা এবং বেশ কিছু ছড়ার বই। ১৯৯১ সালে তিনি পান বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০১৬ সালে একুশে পদক।
পেশাগত জীবনে হাবীবুল্লাহ সিরাজী ছিলেন একজন প্রকৌশলী। ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি যোগদান করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে। বইমেলাকে সামনে রেখে নতুন মহাপরিচালকের মুখোমুখি হয়েছেন কবি মাজুল হাসান…
সা ক্ষা ৎ কা র
❑❑
মাজুল হাসান
সিরাজী ভাই আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন, আপনি বাংলা একাডেমিতে মহাপরিচালক হিশেবে এসছেন, প্রথম মহাপরিচালক, যিনি আশলে সেই তথাকথিত একাডেমিশিয়ান না, তার বাইরে একটা ক্রিয়েটিভ মানুষ, যাকে আমারা বাংলা একাডেমিতে দেখছি। এই যে, আশলে একটা নতুন ইতিহাসও তৈরি হলো, কেমন লাগছে আপনার বাংলা একাডেমিতে কাজ করতে?
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
ধন্যবাদ। আশলে জিনিশটা আমার জন্য একাধারে আনন্দের এবং আপনাদের সবাইকে নিয়ে সম্মানের। যেহেতু আপনি কবি, আমি নিজেও কবিতার চর্চা করার প্রচেষ্টায় আছি, সে জন্য এই বিষয়টি সম্মানের, গৌরবের আমার জন্য। তবে কথা যদি শুরু করতে হয় এভাবে করা যায়, এটি তিন বছরের একটি ভেলা এবং একটা জলচুক্তিতে এসেছি তিন বছরের জন্য, সে-ভেলাকে ভাসাতে হবে কিংবা ভেলাকে এমন একটা তীরে পৌঁছাতে হবে যেখানে নোঙর করা যায়, একটা বন্দরের অন্তত মুখ দেখা যায়; কিছু যাত্রী নামবে কিছু যাত্রী উঠবে। বিবেচনা করি, এটি একার কর্ম নয়, সবাই যেভাবে আপনারা প্রত্যাশা করেছেন সেই প্রত্যাশারই, আমি ধরে নেব, একটি অংশ আমি এবং আমি যদি সামান্যতম বিন্দু হই আপনারা, আমরা সে-বিন্দুকে সম্মিলিতভাবে আমাদের জন্য একটি বৃত্ত তৈরি করব, যে বৃত্তটির কোনো পরিধি নেই।
মাজুল হাসান
জি, এখানে হলো, আমরা দেখি বাংলা একাডেমিকে তো আশলে একাডেমিক দায়িত্বও পালন করতে হয়, একই সাথে সৃষ্টিশীল দায়িত্বও পালন করতে হয়, তো সৃষ্টিশীল দায়িত্বের ক্ষেত্রে যেটা থাকে যে, একটা সময় ছিল যখন এখানে ‘তরুণ লেখকপ্রকল্প’ ছিল, এখন যেটা হচ্ছে না, সাহিত্য-পত্রিকা ছিল, সাহিত্যপত্রিকা এখনো হয়—মাসিক ছিল ‘উত্তরাধিকার’—সেটা দ্বিমাসিক হয়ে গেল। তো, এগুলোর পেছনে এখন নতুনভাবে কী ভাবছেন? আশলে পরিকল্পনাটা কী?
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
পরিকল্পনার অংশ হিশেবে যদি আমি ধরে নিই, আমার এক মাস কেবল হলো, বাংলা একাডেমি সৃজনশীল কর্মও করে, মননশীল কর্মও করে। গবেষণা এর একটি অংশ এবং সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত। নির্ধারিতভাবে, নির্দিষ্টভাবে আপনি বলেছেন ‘তরুণ লেখক-প্রকল্পের’ কথা। যেহেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কিছু নতুন তরুণদের পেয়েছি যারা নতুনভাবে লেখেন, নতুনভাবে কবিতা লেখেন, গদ্য লেখেন এবং মননশীল কাজ করেন। তারই অংশ হিশেবে আমরা প্রাথমিকভাবে একটি অনুবাদের কর্মশালা করার পরিকল্পনা করেছি। পৃথিবীর, বর্তমানে, এটি বলেন পরিকল্পনার সঙ্গে স্বপ্নটা আমার অনেক বড়, যে পাঁচটি ভাষা—জর্মন, ইংরেজি, ফরাসি, হিস্পানি এবং আরবি—এই পাঁচটি ভাষা, আপনি এর সঙ্গে আরেকটি ভাষাও যোগ করতে পারেন, চৈনিক—এ ভাষায় আমরা চেষ্টা করছি যে আমাদের তরুণদের ভেতরে আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং এ ভাষাশিক্ষার ব্যাপারে বাংলা একাডেমিতে, কোনো ট্রেনিং কোর্স যেটাকে বলি, সেই ধরনের কিছু করা।
ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়, স্বাধীনতা আন্দোলনের যে প্রাপ্তি আমাদের সেটির সঙ্গে আমি সবাইকে যুক্ত করতে চাই।
মাজুল হাসান
সেটার জন্য ভাষা ইনিস্টিটিউটও তো আছে…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
বিভিন্ন ভাষা ইন্সটিটিউট আছে, বাংলা একাডেমির পরিকল্পনার এটি হলো প্রাথমিক পর্যায়। আমরা ছ’মাসের একটি কোর্স করলাম, সে [say] আলিয়স ফ্রঁসেজের সঙ্গে মিলে আমরা এখানে ছ’মাসের একটি কোর্স করলাম এবং আমার এখানে ২০ জন শিক্ষার্থী আছে, ২০ জন থেকে অন্তত টেন পার্সেন্ট করলে দুজন বের হয়, দুজন বের হলো, সত্যিকার অর্থে ভাষার ব্যাপারে আগ্রহী হলে তাকে আরো ছ’মাস বাড়াব, ওই দুই জনকে। উচ্চতর শিক্ষা যদি তার জন্য লাগে সে ব্যবস্থা করব। তিনি হবেন আমার কমিশন ট্রান্সলেটার—বাংলা থেকে ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজ। এবং সে জন্যই মূল থেকে, আমি বাইরে থেকে না এনে মূল থেকে শুরু করতে চাই। আমি তৈরি করে নিতে চাই যেভাবে লেখক হিসাবে তৈরি করার জন্য তরুণ লেখক-প্রকল্প ছিল, তরুণদের তৈরি করে নেওয়া হয়েছিল এখানে, তারপরে তারা বাইরে কাজ করবে। আমাদের পরিকল্পনা, আমরা আমাদের ভেতর থেকে আমাদের তরুণদের আমরা তৈরি করে নেব। এই যে একটি পরিকল্পনা আছে, পত্রিকার বিষয়ে যেটা বলেছেন, বাংলা একাডেমিতে উত্তরাধিকার আছে, উত্তরাধিকার দ্বিমাসিক বেরুবে এখন, যেহেতু মাসিক করতে যেয়ে আমরা দেখেছি যে হিমশিম খাই, জনবল এবং লেখা, তাতে দ্বিমাসিক যদি বহুমাত্রিক করতে পারি সেটা আশা করি কম ফলপ্রসূ হবে না। ইতোমধ্যে লক্ষ করেছেন, আমাদের সম্পাদকীয় দায়িত্বে যিনি আছেন তিনি একটি ফেসবুকে স্ট্যাটাসে বলেছেন সরাসরিভাবে যে, কী কী বিষয় এতে থাকবে। ভাষাসাহিত্যের পাশাপাশি দর্শন, বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, প্রকৃতি সবকিছু মিলিয়েই আমরা একটা কাগজ করতে চাচ্ছি। কিন্তু…
মাজুল হাসান
মানে, আপনারা ইম্প্যাক্ট ফেলতে চান, সে-কারণেই কি এটা করা নাকি আশলে গুছিয়ে করতে চান?
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
গুছিয়ে একটু করতে চাই এবং এর ভিন্নতায় বাংলা একাডেমির একটা গবেষণা-পত্রিকা আছে সেটাকে চালু করছি, বাংলা একাডেমির একটা ইংরেজি জর্নাল আছে সেটাকে চালু করছি এবং বাংলা একাডেমির একটা বিজ্ঞান-পত্রিকা আছে সেটাকেও চালু করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। ‘ধানশালিকের দেশ’ বাংলা একাডেমির একটি শিশুদের পত্রিকা এটি দুবছর যাবৎ আমরা বের করতে পারি না, একটি যৌথ সংখ্যা করে সেটাকে রেগুলার করার চেষ্টা করছি।
মাজুল হাসান
যৌথ সংখ্যাটা আশলে কী?
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
দুবছরের একটি যৌথ সংখ্যা। জাস্ট একে রেসে আপডেটেড হওয়ার জন্য…
মাজুল হাসান
ট্র্যাকে ফেরত নিয়ে আসা…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
ট্র্যাকে ফেরত নিয়ে আসার জন্য। আমাদের বিভাগগুলোর নানা খামতি আছে…
মাজুল হাসান
জনবল খামতি একটা বড় কারণ…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
না না। এই জনবল খামতির ব্যাপারে বাংলা একাডেমি প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, আমাদের প্রবিধান যদি অনুমোদিত হয়ে যায় আমাদের জনবলের যে খামতিটা আছে, এবং জনবল, সদর্থে দক্ষ জনবল! যার যে কাজ সেই কাজ করার জন্য তাকে নিয়োগ দেওয়া কিংবা নিবেদিত করা সে ব্যাপারটি। আমি শুরুতেই বলেছি আমার এক মাস এখানকার বয়স এবং আমার এই স্বপ্নগুলো দেখা, মানে, সার্বিকভাবে দেখা। গুছিয়ে কিছু পরিকল্পনা লিখিতভাবে বাস্তবায়ন করার উপযোগী করে, আশা করি মাস তিনেকের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে পারব। আমার সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলা একাডেমির বইমেলা।
মাজুল হাসান
জি। এই বইমেলা নিয়ে কথা বলতে চাই। বইমেলায় এবার তো আশলে ‘একটা বিজয়’ এই হলো স্লোগান।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
বিজয় নব পর্যায়ের।
মাজুল হাসান
এই যে বিজয়ের একটা আমেজ এবং সেটিকে এবার মেলায় ধারণ করা, সেটার জন্য মেলারও আশলে কিছু পরিবর্তন আসছে বলে মনে হয়।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
এসেছে পরিবর্তন। আমরা এই বিজয় ৫২ থেকে ৭১ বললাম এ কারণে, আপনি ইতোমধ্যে হয়তো জেনে থাকবেন যে মেলায় ৫টি চত্বর থাকবে, চত্বর ৫ জন ভাষাশহিদের নামে। এটি আমরা ভাষা-আন্দোলনের স্মৃতি-স্মারক হিশেবে করতে চাই। আর রইল ৭১, মহান মুক্তিযুদ্ধ। তার বিজয়-পরবর্তী আমাদের স্তম্ভ, এবারে যে স্বাধীনতা-স্তম্ভ সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে, মেলার সঙ্গে মেলার অংশ হিশেবে, অঙ্গ হিশেবে এটি প্রধান কাজ করবে। মেলায় ঢোকার পরেই আপনার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করবে স্বাধীনতা-স্তম্ভ। এবং আপনি যখন মেলার ভেতরে…
মাজুল হাসান
মানে, মেলার পরিধি বাড়ছে এবং স্বাধীনতা-স্তম্ভ যোগ হচ্ছে…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
যোগ হচ্ছে কিন্তু সে তার জলভাগসহ, ওয়াটার বডি যেটা, জলভাগসহ সে যোগ হচ্ছে। যার ফলে…
মাজুল হাসান
তার পূর্ণ সৌন্দর্য নিয়ে…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
পূর্ণ সৌন্দর্য নিয়ে… এর আগের বছরও ছিল কিন্তু ওখানে একটা ফেন্সিং কিংবা একটা বেড়া, কাচের একটি ছিল… কিন্তু এবার সেটা আমরা খুলে দিচ্ছি, উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। অতএব, আপনি যাতে অনুভব করতে পারেন আমার ভাষা-আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়, স্বাধীনতা-আন্দোলনের যে প্রাপ্তি আমাদের সেটির সঙ্গে আমি সবাইকে যুক্ত করতে চাই। এ সব কিছু দেখা অন্তত আমার শিশুদের জন্য, কিশোরদের জন্য, তরুণদের জন্য। এ মেলায় এসে বই না কিনুক যেন বুঝতে পারে আমাদের একটি ভাষা-আন্দোলন হয়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই ব্যবস্থা নিই। আমাদের একটি মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তার অবস্থানের কারণে এইখানে আমরা এবং ৪৭ বছর পরে এসে আমি শিশুটি যেন না ভুলে যাই সেই ৫২ এর কথা, সেই ৭১ এর কথা। চেতনার একটি বড় অংশকে যুক্ত করতে চাই তাদের ভেতর ভেতরে।
মাজুল হাসান
জি। মানে, এখন এর বাইরে হলো, আমরা লেখকদের জন্য, নতুন লেখকদের জন্য চত্বরের কথা শুনছি…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
হ্যা, নতুন লেখকদের জন্য, ‘লেখক বলছেন, লেখক বলবেন’ এই নামে একটি চত্বর হচ্ছে, সেই চত্বর থেকে একজন লেখকের নির্দিষ্ট একটি বই নির্বাচনি বাংলা একাডেমিই করবে এবং বালা একাডেমি চেষ্টা করবে, মানে, যথাযথভাবে সৎ থেকে ভালো একজন লেখককে চিহ্নিত করা কিংবা বইকে চিহ্নিত করা। ওই লেখকের, তার বইয়ের উপরে সেই চত্বর থেকে বলবেন এবং দৈনিক আমরা ৫ থেকে ৭ জন যা পারি অ্যাকোমোডেট করব। একেকটি সেগমেন্ট কিংবা অংশ ২০ মিনিটের ভেতরে থাকবে।
মাজুল হাসান
জি। মানে ওখানে লেখককে পরিচিত করে দেওয়া…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
পরিচিত করে দেওয়া হবে। লেখক বলবেন তার বইয়ের উপরে। এর পরে যারা, দর্শক-পাঠক-শ্রোতা, ওখানে থাকবেন তাদের জিজ্ঞাসার কিছু থাকলে, লেখক উত্তর দেবে…
আমরা মেলার পরিসরকে বাংলা একাডেমির বাইরে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে নিয়ে গেছি, এবং আপনি খেয়াল করে থাকবেন মাঝখানের যে রাস্তাটি এটি হলো বিভাজন রেখা, বাণিজ্যের অংশ এবং মননের অংশ।
মাজুল হাসান
জি, আচ্ছা। মানে, এখানে একটা দ্বিপাক্ষিক…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
ইন্টারাকশান…
মাজুল হাসান
ইন্টারাকশান হবে…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
এটি এক ধরনের একটি প্রকাশনা অনুষ্ঠান, এক ধরনের স্বল্পকালীন একটি প্রকাশনা অনুষ্ঠান।
মাজুল হাসান
জি। মানে, এর বাইরে আমাদের তো মোড়ক-উন্মোচন…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
মোড়ক-উন্মোচন-মঞ্চ যথারীতি থাকবে, যা যা কার্যক্রম আছে… এটি বাড়তি।
মাজুল হাসান
নতুন একটি আইটেম… আচ্ছা, মেলায় যেহেতু এবার আপনারা পরিধিটা বাড়াচ্ছেন, মেলায় ঢোকার মুখগুলোতে একটা জটলা থাকে, এবার যেহেতু স্বাধীনতা-স্তম্ভ পর্যন্ত মেলার পরিধি যাচ্ছে, লোকজন সমাগম আরও বেশি হবে, ঢোকার সময় এবং বের হওয়ার সময়… এই এক্সিট এবং এন্ট্রিগুলো…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
আগে এখানে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, নিরাপত্তা। মনে রাখতে হবে আলোর ব্যবস্থা, এবং মনে রাখতে হবে আমাদের সন্তানদের, শিশুদের, মা-বোনদের, সার্বিক অর্থে তারা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে মেলায় আসতে পারেন, কোনো রকমের শঙ্কা যেন না থাকে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে গত কয়েক বছরেও বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করেছে আরেকটি গেট করার জন্য, পূর্ব দিকে, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের দিকে। যাতে করে ওই অংশ দিয়ে ওই এলাকার লোকজন ঢুকলে পার্কিং থেকে শুরু করে নানান জটলা কমে যাবে। আমরা এর ভিতরে কয়েকটি সভা করেছি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে—পুলিশ, পিডব্লিউডি…
মাজুল হাসান
মানে, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের ওইদিক দিয়ে যদি ঢোকে তাহলে ওইদিকে তো পার্কিংও লাগবে না…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
প্রচুর পার্কিং ওখানে। মাঠ খোলা। যে মাঠে জনসভা হয়…
মাজুল হাসান
মানে, ওটাকে আপনারা পার্কিং হিসাবে…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
পার্কিং হিসাবে ব্যবহার করব আমরা। আর ঢোকা-বের হওয়ার জন্য একটি গেট করা হবে। এটির ব্যাপারে আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিটিং করছি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের কথা হয়ে গেছে, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়ে গেছে, আমরা এখনো আশাবাদী, হয়তো আমরা পারব এ পাশটাকে খুলে একটা গেট করে দিতে।
মাজুল হাসান
সামনে মেট্রোর কাজ চলছে…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
মেট্রোর কাজ যেটুকুন তারা করেছে, হয়তো খেয়াল করেছেন তারা কাজ ওই অবস্থায় রেখে তাদের কর্ম স্থগিত ঘোষণা করেছে এবং আগামী ২৫ তারিখের ভেতরে এই রাস্তাটি আগের মতো একদম সাফ সুরত আপনারা পাবেন। এবং এরই অংশ হিশেবে তারা কাজ করে যাচ্ছে।
মাজুল হাসান
তো, মেলা একটা বিষয়, মানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং বাংলা একাডেমির মূল একটা মাথাব্যথার কারণ, বিরাট কর্মযজ্ঞ হচ্ছে মেলা, এবং এটাতেই বিরাট একটা সময় চলে যায়, এটা নিয়ে সমালোচনা আছে, আলোচনা আছে যে এই একটা মেলা অর্গানাইজ করতেই বাংলা একাডেমির আশলে বিরাট একটা শ্রম চলে যায়, তাহলে গবেষণাটা কখন হবে, সৃষ্টিশীল জায়গাটা কোথায় হবে। এই জন্য পর্যাপ্ত জনবলেরও একটা ব্যাপার থাকে, সেই দিক থেকে আপনারা ভাবছিলেন যে…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
‘আমরা ভাবছিলাম’, আপনি যে কথাটি বলেছেন কথাটি সঠিক, তবে এ মেলাটি চরিত্রগতভাবে একটু অন্যরকম হয়ে গেছে শুরুর থেকে। একুশের মেলা, চেতনার মেলা হয়ে গেছে। এই মেলাটিকে আমরা কখনো বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি নি, তাহলে আমরা বলতাম যে এই মেলাটি সরিয়ে নেওয়া হোক। কিন্তু এখন যে অবস্থায় এসেছে, বাংলা একাডেমির ঘাড়ে যে দায়িত্ব পড়ে গেছে যে কারণে আমরা মেলার পরিসরকে বাংলা একাডেমির বাইরে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে নিয়ে গেছি, এবং আপনি খেয়াল করে থাকবেন মাঝখানের যে রাস্তাটি এটি হলো বিভাজন রেখা, বাণিজ্যের অংশ এবং মননের অংশ। বাংলা একাডেমির অংশে সারা মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালা হয়, এক তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন এবং এ বছরে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বাংলাভাষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কবি, কবি শঙ্খ ঘোষ এবং মিশরের একজন বিখ্যাত লেখক-অনুবাদক এবং যিনি বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য শুধু নয় বাংলাদেশের রাজনীতি, বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনা নিয়ে উৎসাহী এবং কিছু কাজও করেছেন, মোহসেন; তিনি আসছেন। তবে এর পাশাপাশি আমরা আমাদের যারা মহাজন ব্যক্তি তাদের জন্মশতবর্ষ পালন করছি আমাদের আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। প্রথম বারের মতো আমরা চাচ্ছি যে মূল অনুষ্ঠানের সঙ্গে যেন কবিরা যুক্ত হন। প্রতিদিন সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে দুজন করে কবি কবিতা পাঠ করবেন। এবং দুজন আবৃত্তিকার আবৃত্তি করবেন। তারপরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। কিন্তু কথা উঠতে পারে একুশে ফেব্রুয়ারির দিন সকালে তো কবিতা পাঠ হয়, যেহেতু সেই কবিতা পাঠটি নিয়ে নানা রকমের আপত্তি আছে, তার মান নিয়ে তার অংশগ্রহণ নিয়ে, ওটি থাকবে…
মাজুল হাসান
তার বাইরেও এটা হবে…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
এর বাইরে মূল প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কবিরা কবিতা পড়বেন।
মাজুল হাসান
মানে প্রতিদিনই…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
প্রতিদিনই এটা থাকবে… দুজন করে কবি প্রতিদিন কবিতা পড়বেন। ২ তারিখ থেকে শুরু করে ২৭ তারিখ পর্যন্ত। এটি আমি মনে করি, যেহেতু আমি দু চার লাইন পদ্য লিখি, আমার বন্ধুদের জন্য এটি একটি… সম্মানীসহ যেন তাদেরকে সম্মান করতে পারি। আর একটি বিষয়, বাংলা একাডেমির বিগত যারা মহাপরিচালক ছিলেন সবার কাছ থেকে আমি পরামর্শ চেয়েছি, পরামর্শ চাই, এবং তারা এবারের প্রতিটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন, সভাপতি হিশেবে কেউ, আলোচক হিশেবে কেউ যোগ দেবেন। যারা জীবিত আছেন।
বাংলা অভিধান যেটি আছে, অভিধানের কিছু কিছু অংশ নিয়ে সামান্য বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, সেই বিতর্কগুলো দূর করে নব পর্যায়ের আরেকটি অভিধান সংশোধন করতে চাই।
মাজুল হাসান
তাদেরকে এটা একটা সম্মানিত করা এবং তাদের কাছ থেকেও অভিজ্ঞতা…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
অভিজ্ঞতা শেয়ার করা বড় একটা ব্যাপার।
মাজুল হাসান
আমি একটু…
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
আরেকটু এই ব্যাপারটা বলে নিই, গবেষণা এবং সৃজনশীন কাজের জন্য আমাদের দুটো পরিকল্পনা ইতোমধ্যে আমরা করেছি। গবেষণার অংশ হিশেবে, এখানে একটি আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ আছে, তা নিয়ে কিছু কথাবার্তা আছে, সেটিকে আমরা আবার পর্যালোচনা করতে চাই। দ্বিতীয় কথাটি হলো, বাংলা অভিধান যেটি আছে, অভিধানের কিছু কিছু অংশ নিয়ে সামান্য বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, সেই বিতর্কগুলো দূর করে নব পর্যায়ের আরেকটি অভিধান সংশোধন করতে চাই। আর সামনে স্বাধীনতার ৫০ বছর। যদি, আমার আয়ু থাকে, বাংলা একাডেমির কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রণালয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চান, আমার সময়ের তিন বছর সময়ের ভেতরে এটি পড়ে বলেই বলছি, তারা যদি চান, আমি ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্বাধীনতার উপরে, মুক্তিযুদ্ধের উপরে ৫০খানা বই করব, যা শুধু বাংলায় নয়, বিভিন্ন ভাষায়; যারই অংশ হিশেবে আপনাকে কিছুক্ষণ আগে অনুবাদের কথাটি বললাম।
মাজুল হাসান
বাংলা একাডেমির ডিজির বাইরে সবার আগে আপনি একজন সৃষ্টিশীল মানুষ, একজন প্রথিতযশা কবি, বাংলা একাডেমির দাপ্তরিক কাজের চাপে আপনি কি আপনার সৃষ্টিশীল কাজ ঠিক মতো করতে পারছেন? কোনো সমস্যা হচ্ছে না?
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
সমস্যা তো হচ্ছেই। দায়িত্ব নেয়ার পর আমি দুটো লেখা লেখেছি, তার একটা আলতাফ [আলতাফ শাহনেওয়াজ] আমাকে অনেকটা বন্দুক ঠেকিয়ে আদায় করার মতো লিখিয়ে নিয়েছে। তবে আমি গুছিয়ে নিয়ে মাস তিনেকের মধ্যে আবারও নিজের সৃষ্টিশীল কাজে.. ট্র্যাকে ফিরতে পারব বলে মনে হয়, দিন শেষে সেটাই তো আশল…
মাজুল হাসান
আমরাও সেটা আশা করি।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
আবারো কৃতজ্ঞতা জানাই আর নিজের লেখালিখির সঙ্গে যদি এটি যুক্ত করতে পারি সেটি হবে আমার উপরি পাওনা।
মাজুল হাসান
জি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
ধন্যবাদ মাজুল। ধন্যবাদ মাজুল হাসান।
মাজুল হাসান
থ্যাংকিউ।
মাজুল হাসান
জন্ম : ২৯ জুলাই ১৯৮০, দিনাজপুর।
পড়াশুনা করেছেন দিনাজপুর জিলা স্কুল, নটরডেম কলেজ
ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ:
বাতাসের বাইনোকুলার ● বাঙলায়ন প্রকাশনী, ২০১০।
মালিনী মধুমক্ষিকাগণ ● বাঙলায়ন প্রকাশনী, ২০১৪।
ইরাশা ভাষার জলমুক ● চৈতন্য, ২০১৬।
প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ:
টিয়ামন্ত্র ● ভাষাচিত্র প্রকাশনী, ২০০৯।
নাগর ও নাগলিঙ্গম ● বাঙলায়ন প্রকাশনী, ২০১২।
অনুবাদগ্রন্থ:
টানাগদ্যের গডফাদার, রাসেল এডসনের কবিতা ● চৈতন্য, ২০১৬।
মাজুল হাসান পেশায় সাংবাদিক। বর্তমানে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে বার্তা বিভাগে কর্মরত।
Latest posts by মাজুল হাসান (see all)
- শান্তিপ্রিয় ভীরুতাঁরা - June 4, 2019
- ক্রিস্তো রেদেন্তর ও ৪টি পামগাছ - January 24, 2019
- বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সাক্ষাৎকার - January 23, 2019