
১.
“দুটি পঙ্ক্তির মাঝখানে
যে শূন্যস্থানে জাল বুনতে থাকে
একটি মাকড়সা।”
(ড্রাগন ফলের চোখ, পৃ. ৬২)
কবিতা নিয়ে কথা বলাও সম্ভবত দুই পঙ্ক্তির শূন্যস্থানে বোনা জালে আটকা পড়ে মাকড়সার খাবারে পরিণত হওয়ার মতোই ব্যাপার। কারণ, মাকড়সাগুলোকে আমরা যেভাবে বুঝি/ আর যেভাবে তারা আমাদের স্বপ্নের ভেতর ঢুকে/ বুঝে নেয় আমাদের—সম্ভবত এক নয়। কারণ কবি তো বলছেনই যে, তারা আমাদের স্বপ্নের দখল নেয়, কিন্তু আমরা নিতে পারি না। ফলে কবিতা আলোচনা বা ব্যাখ্যার নামে যা-কিছু বলা হতে থাকে, তা কবিতাটির জগৎ থেকে দূরবর্তী এবং করুণভাবে ব্যর্থ। তা-সত্ত্বেও, কবিতা বিষয়ে আমাদের কথা বলাবলি, আলোচনা, তাৎপর্য অনুসন্ধানের কাজ চালিয়ে যেতে হয়, যেহেতু এটি পাঠ-পরবর্তী স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়ার অংশ, যা কবিতার স্পর্শ-অযোগ্য অনুভববেদ্য জগৎকে ঘিরে পাঠকের অনুভূতি জানার সুযোগ করে দেয়; আবার তা না-হলেও দেখা যায়, কবিতাকে ঘিরে পাঠকের কল্পনাকে উদ্দীপ্ত হতে তা জ্বালানি জোগায় কিংবা কবিতাটি যে রহস্যময় ও সুন্দর এই সত্যকে আরও প্রতীয়মান হতে সাহায্য করে। কবি রায়হান রাইন-এর এবারের বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ একদিন সুবচনী হাঁস নিয়ে কিছু বলতে চাওয়া, পাঠক হিশেবে নিজের কল্পনাশক্তিকে উদ্দীপিত করতে জ্বালানি খোঁজার প্রচেষ্টা মাত্র, আর কিছু নয়।
মীমাংসাহীনতাই তার গন্তব্য; লক্ষ্য অসীমতাকে অন্তহীনতার উপলব্ধিকে স্পর্শ করা।
নব্বই দশক, যে-সময়ে তিনি কবি হিশেবে পঠিত হয়ে উঠেছেন, সে-সময়ে তাঁর সহযোগী যারা, তাদের মধ্য থেকে রায়হান রাইনকে কবি হিশেবে আলাদা করে ফেলা যায়—কবিতার উপকরণগুলোকে যে-উপায়ে তিনি ব্যবহার করেন এবং কবিতা করে তোলেন তার ভিত্তিতে। এজন্য এই বইটির একটি কবিতা উদ্ধৃত করা যাক:
প্রতিপালকের আস্তাবল, খড়-বিচালি আর স্নেহের অভ্যাস থেকে
ছুটি পেয়েছে একটি ঘোড়া।
যেন বিমূঢ় আর হতবুদ্ধি এক করুণ দেবতা
হঠাৎ এসে দাঁড়াল জামির গাছের নিচে, অন্ধকারে;
তার চোখের ভেতর থমকে আছি আমি
আর আমার সময়গ্রন্থি বিরামহীনভাবে খুলে যাচ্ছে তার চোখের আলোয়।
দেখলাম, ঘোড়াটি খানিকক্ষণ পর পর
একেকবার চোখ মুদে অদ্ভুত আঁধার দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছে আমার জীবন।
(ঘোড়া, পৃ. ৩৮)
শুধু এই কবিতাটি নয়, পুরো বইটি জুড়েই যে রচনারাশি তাতে দেখতে পাই জগতের সঙ্গে কবির সম্বন্ধ-নির্ণয়ের, জগৎকে ব্যখ্যার, অনুভবের ও প্রশ্ন-উত্থাপনের প্রয়াস। একজন দার্শনিকের প্রক্রিয়ার সঙ্গে এর মৌলিক পার্থক্যও আছে—একজন দার্শনিক জগৎ ও জীবনকে নিয়ে ভাবেন, নিরন্তর জিজ্ঞাসা ও সমস্যা উত্থাপন করে চলেন এবং তার জবাব ও সমাধান নিজের ধরনে (শাস্ত্রসম্মত উপায়ে) হাজির করেন; কিন্তু রায়হান রাইন কোনো সমাধানের অভিমুখে যান না, ব্যাখ্যার ছলে তিনি রহস্যময়তাকে প্রসারিত করেন শুধু। মীমাংসাহীনতাই তার গন্তব্য; লক্ষ্য অসীমতাকে অন্তহীনতার উপলব্ধিকে স্পর্শ করা। রায়হান রাইনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ তুমি ও সবুজ ঘোড়া-তেও আমরা একই প্রয়াস লক্ষ করেছি। তবে প্রথম বইটির বৃত্ত থেকে কবির সরে আসা ও উত্তরণ লক্ষণীয় এখানে। বর্তমান বইটিতে তিনি চিত্রকল্প ও বিন্যাস বিষয়ে আরও বেশি অভিনিবিষ্ট, বাগ্বিস্তারে আরও সংযমী। উদ্ধৃত কবিতাটিতে লক্ষ করি, কবি বহুচর্চিত একটি প্রতীক ‘ঘোড়া’-কে গ্রহণ করেছেন কবিতাটির কেন্দ্র চরিত্র হিশেবে; আর তা ব্যবহৃত হয়েছে সচরাচরের প্রতীকীমূল্যের বাইরে। প্রতিপালকের কাছ থেকে মুক্ত হওয়া একটি ঘোড়ার মুখোমুখি হয়ে কবি নিজের সময়কে ঘোড়াটির চোখের ভেতরে উন্মোচিত হতে দেখেন—এই উন্মোচন আসলে নিজের কাছেই। ঘোড়াটি মুক্ত, তাই তাকে কবির মনে হয় এক বিমূঢ় ও হতবুদ্ধি, করুণ দেবতা—তাই সে কথকের জীবনকে ধুয়ে দিতে পারে অদ্ভুত আঁধার দিয়ে।
আমাদের মনে কি তখন এই প্রশ্ন জেগে ওঠে না যে, প্রতিপালকের খড়-বিচালি আর স্নেহের অভ্যাস থেকে গৃহপালিত কোনো পশুর মুক্তি পাওয়া কি সম্ভব? ঘোড়াদের জন্য স্বাধীন বিচরণভূমি কিংবা অরণ্য কি আর আছে? মহিষকুড়ার উপকথার আশফাক যেমন জেনেছিল, সব অরণ্য আর জঙ্গল কারো-না-কারো, ফলে বুনো মহিষও কারো-না-কারো। তেমনটি আমরাও জানি। আর তাই বুঝতে পারি, ঘোড়াটি তার পশুসত্তা নিয়েই এখানে ঘোড়াত্বকে অতিক্রম করে গেছে।
রায়হান রাইনের কবিতার একটি বিশেষত্ব এই যে, প্রায়ই তিনি আখ্যান কিংবা আখ্যানাংশ ব্যবহার করেন।
২.
রায়হান রাইনের কবিতার একটি বিশেষত্ব এই যে, প্রায়ই তিনি আখ্যান কিংবা আখ্যানাংশ ব্যবহার করেন। তুমি ও সবুজ ঘোড়া থেকেই এই প্রবণতা বাহিত হয়ে এসেছে এবং এর সঙ্গে যোগ করা যেতে পারে যে, তিনি একজন গল্পকার ও ঔপন্যাসিকও। একদিন সুবচনী হাঁস-এ আমরা লক্ষ করেছি, গদ্যকবিতাগুলোতে গল্প বলবার ঝোঁক কমেছে, বর্ণনাত্মক গদ্যকবিতাও পাচ্ছি এখানে। প্রথম বইটিতে আখ্যান-বর্ণনায় বিভিন্ন ধরনের প্রকৌশল অবলম্বিত হয়েছিল, তা সাম্প্রতিকটিতে নেই বললেই যথার্থ হয়। তবুও পাঠককে অনুরোধ করব এই টানা গদ্যকবিতাটি পড়তে:
বিকালের রেস্টুরেন্টে হঠাৎ সে এল, যেন একটা দমকা বাতাস এসে বসল আমার সামনে। তার এই হঠাৎ আসার মায়া কথার জন্ম দিল; ধীরে ধীরে দুজনের মাঝখানে গড়ে উঠল একটা প্রতীকের অরণ্য। আর সেখানে এক গহিন জঙ্গল থেকে অলসভাবে বেরিয়ে এল একটা প্রকীকের বাঘ। ভয় পেয়ে চিৎকার শুরু করল সে, “বাঁচাও, বাঁচাও।” দৌড়াতে গিয়ে সামনে যে নদীটা পড়ল, সেখানে ছিল কুমিরের ভয়।
আমি বললাম, এটাই অমীমাংসেয়তার নিয়তি।
সে বিশ্বাস করল না।
বললাম, প্রতিবার গল্পটা শুরু হবে যেখানে এটা শেষ হয়।
গল্পটাকে সে অস্বীকার করল। কিন্তু যখনই একটা নিরুপদ্রব অঞ্চলে গিয়ে দাঁড়াল, দেখতে পেল প্রতীকের জঙ্গলটা তাকে ভেতরে রেখে বাড়িয়ে নিয়েছে সীমানা, কথার জন্ম হয়ে চলেছে তার মনে।
(কয়েকটি মুহূর্ত ২,পৃ.৫৪-৫৫)

৩.
এই বইয়ের কবিতাগুলোতে অক্ষরবৃত্ত ছন্দ বাহকের ভূমিকা পালন করেছে—এমনকি টানা গদ্যকবিতাগুলোতেও দেখা যাবে অক্ষরবৃত্তের স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। পয়ারের ব্যবহার করেছেন তিনি, যেহেতু অক্ষরবৃত্তকে অবলম্বন করেছেন। আর তাই চতুর্দশপদীর দেখাও এখানে পাই, যাদের বরং সনেট বলা উচিত। এখানেও আখ্যান বা আখ্যানাংশকে ব্যবহার করেছেন কবি। যদিও লক্ষ করেছি সনেটগুলোতে এসে ভাষা তার সাবলীলতা হারিয়েছে অনেকসময়ই—অবশ্য ‘নীলগিরি,’ ‘পরদেশি’ ব্যতিক্রম। ভাষা নিয়ে সনেটগুলোতে তিনি যেন অস্বস্তিতে ভুগেছেন। ছন্দের ক্ষেত্রে মাত্রাবিন্যাসে মনে হয়েছে একটু বেশি স্বাধীনতাকামী। পড়তে পড়তে মনে হয়েছে বিষয়বস্তু ও উপকরণের সঙ্গে ভাষার রসায়ন জমে ওঠে নি। এই জমে না-ওঠার ব্যাপারটি লক্ষণীয় ‘স্বপ্নগুলি’ কবিতাতেও। মনে হয়েছে ছন্দে বিন্যস্ত করার ঝোঁক এদের হয়ে ওঠাকে হয়তো ক্ষতিগ্রস্তই করেছে; কখনওবা সনেটের আঁটো-কাঠামো ভাষার প্রবাহকে বাধা দিয়েছে।
ছন্দের মাত্রাগণনায় কবিরা স্বাধীনতা নিতেই পারেন, যার একটি স্বাভাবিক ফল হলো: অক্ষরবৃত্তে শব্দমধ্যবর্তী বদ্ধাক্ষরকে, যারা সংযুক্ত হয় নি (যেমন: ছুটছে, সামনে, চলছি ইত্যাদি ধরনের শব্দের ক্ষেত্রে), দুই মাত্রা হিশেবে ধরা। এটি অনেকসময়ই উৎরে যায়, যে-সাফল্য রায়হান রাইনের আছে। কিন্তু এদেরকে ব্যাকরণ মেনে তিনি একমাত্রাও গুণেছেন কখনও; এবং তা যখন একই বাক্যে বা কবিতায় হয়েছে, কখনও কখনও পড়তে সমস্যা হয়েছে। একটি কবিতায় (সফলতা, পৃ. ২৭) ‘আকাশ-উঁচু’ শব্দটিকে চারমাত্রা করার কারণে যে মাত্রাসাম্য ও তজ্জনিত ধ্বনিগত সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়, তার অনুসরণে পরের পঙ্ক্তিতে কিন্তু ‘মেঘ-কালো’ কে তিন মাত্রা ধরে পড়তে দেন নি কবি। উভয়ক্ষেত্রেই সমাসবদ্ধ পদ সন্ধির সাহায্যে ধ্বনিসাম্য লাভ করবে, এটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু কবির অভিপ্রায় দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ছিল স্বতন্ত্র। কোথাও কোথাও লক্ষ করেছি পয়ারের আট মাত্রাকে দ্বি-খণ্ডিত করে তার মধ্যে ছয় মাত্রার পর্ব ঢুকে গেছে। ফলে সুরের চলন বলা যায় টাল খেয়েছে—
তবু দুইজন
সহজ দোস্তিতে মেতে চোখ মেরে যায়
দুজনকে, পারুল গাছের ছায়া ধীরে
মিশে যায় তাদের ঘুমের সঙ্গে, আর
পাহারায় জেগে থাকে সহজ দুপুর।
(দুপুর, পৃ. ৩৪)
এই রচনাগুলোতে ভাষা রায়হান রাইনের বশে থেকে অসম্ভব সব কাণ্ড ঘটিয়ে গেছে।
৪.
বইটির সবচেয়ে উজ্জ্বল অংশ হলো ‘ড্রাগন ফলের চোখ’ শিরোনামে ধৃত তিন-চার পঙ্ক্তির কবিতাগুচ্ছ। এরা সংখ্যা-চিহ্নিত নয়, তারকাচিহ্ন দিয়ে স্বতন্ত্র অনুভবগুলোকে পরস্পর-বিচ্ছিন্ন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এরা ভাব, অনুভূতি ও প্রেক্ষণবিন্দুর দিক থেকে পরস্পর আলাদা হয়েও ধরনের দিক থেকে একই রকমের। তাই এক শিরোনামের ছাতার নিচে আসতে পেরেছে—যেন একটিই কবিতা। একটি ড্রাগন ফলের যেমন বিন্দু বিন্দু অসংখ্য চোখ থাকে, তেমনি সূক্ষ্ম ও গভীর অসংখ্য পর্যবেক্ষণের সমবায়ে কবি একটি অনুভববিশ্বকে উপস্থিত করতে পেরেছেন এখানে। যেমন:
একটি মৃত্যু আমাদের স্বপ্নের ভেতর ঢুকে
তাড়াতে থাকে ঘাস খেতে থাকা মহিষ
আর পশমী ভেড়াদের।
*
যে শিশুর কান্নার পাশে থাকে ঠাণ্ডা পুকুর,
বাতাসের নরম বাক্য আর
ভাষান্তর করার একটি আয়না।
*
একটি চোরাগোপ্তা চোখ—তোমার ভেতর,
যা দেখতে থাকে
সবুজ রঙ দেখার নিথর মুহূর্তটিকে।
এই রচনাগুলোতে ভাষা রায়হান রাইনের বশে থেকে অসম্ভব সব কাণ্ড ঘটিয়ে গেছে। এখানে তিন বা চার পঙ্ক্তিতে ভাঙা একটিমাত্র বাক্যে তিনি ধরতে চেয়েছেন ছোট ছোট মুহূর্তকে, মুহূর্তের প্রবাহে ভাসমান অনুভূতি ও বস্তুকে; যেন তাদের বুঝতে চাইছেন, কিন্তু বোঝার চাইতে না-বোঝার, মীমাংসাহীনতার অানন্দ ও সৌন্দর্যই রচিত হয়েছে প্রতিটি মুহূর্ত ও অনুভবকে ঘিরে। মহাসময়ের প্রবাহে ভেসে চলা ছোট ছোট বিন্দুগুলো এখানে যেন অসীম হয়ে উঠতে চেয়েছে। প্রকৌশলের দিক দেখলে চোখে পড়ে, এদের অধিকাংশই অসমাপ্ত বাক্যে রচিত। কারণ হয়তো তিনি এদের শেষ হতে দিতে চান না—বাক্যগুলোতে থাকা সাপেক্ষ সর্বনাম ও তার ক্রিয়াপদ অপেক্ষা করে আছে অপর সাপেক্ষ সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের, কিন্তু তারা অনুপস্থিত থাকে এবং এই অনুপস্থিতি পাঠকের অনুভূতি ও কল্পনায় বাজতে থাকে। আমরা বুঝতে পারি, বুঝে ওঠার আগেই অনুভূতি ও আবেগ দিয়ে এই পঙ্ক্তিরাশি আমাদের স্পর্শ করতে পেরেছে, যেমনটা রায়হান রাইন তার ড্রাগন ফলের একটি চোখে বলেছেন—
একটি পঙ্ক্তি যা খুঁজে পায়
তোমার ভেতরকার জলাশয়ের একেবারে নিচে পড়ে থাকা
কয়েকটি রঙিন পাথর।
রাশেদুজ্জামান
বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
পেশা : সরকারি কলেজে শিক্ষকতা।
প্রকাশিত বই:
পাখি ও প্রিজম [কবিতা, ২০০৮, র্যমন পাবলিশার্স]
ঘুমসাঁতার [কবিতা, ২০১২, বনপাংশুল]
ই-মেইল : rashed_kobi@yahoo.com
Latest posts by রাশেদুজ্জামান (see all)
- হোসেন দেলওয়ারের কবিতা : বনময়ূরের ডাকে জমা হওয়া মেঘ - April 30, 2018
- মুদ্রণ-বিন্যাস ও এক অনতিলক্ষ্য ছন্দঃস্রোত : পরিপ্রেক্ষিত টানা গদ্যকবিতা - October 1, 2017
- সিকদার আমিনুল হকের গদ্যকবিতার ভাষা ও তার বিবর্তন - June 20, 2017