আবুল হাসানের অজ্ঞান

পরম করুণাময় এই অধমকে দিয়ে ‘কাজী নজরুলের অজ্ঞান’ নামে এক নিবন্ধ লিখিয়ে নিয়েছেন। (খান ২০০৩) এই নিবন্ধপাঠ অনেক বন্ধু লেখককে দরজার কাছ থেকে বিদায়ও জানিয়েছেন। সেই বন্ধুদের বন্ধ দরজায় করাঘাতের উপায়স্বরূপ আজ ‘আবুল হাসানের অজ্ঞান’ লেখা স্থির করলাম। যাঁরা আবুল হাসানের অনুরাগী এতে তাঁদের কত মুনাফা হবে জানি না, তবে আমরা যারা ফ্রয়েডের ভক্ত তাঁরা লাভবান হবো বলেই আশা করি।
‘অজ্ঞান’ বলতে ফ্রয়েড কী বুঝিয়েছিলেন তা অনুমান করতে যাঁদের কষ্ট হয়, আবুল হাসানের ‘আবুল হাসান’ কবিতাটি পড়লে সেই কষ্ট খানিক লাঘব হবে—এটুকু ভরসা আমার আছে।
বাংলা সাহিত্যে, বঙ্কিমচন্দ্রের নকল করে বলা চলে, শোচনীয় ঘটনার অভাব নাই। মহান কবি শামসুর রাহমান লিখিত আবুল হাসান রচনা সমগ্র গ্রন্থের ‘ভূমিকা’ জিনিসটিও এই শোচনীয়ের তালিকায় উঠেছে। কবির জীবনী জানলেই কবিতার ভালমন্দ বোঝা যায়—এই সরল বিশ্বাস থেকে বাংলা সাহিত্য এখনো ছাড়া পায় নাই। বঙ্কিমচন্দ্র মনে করতেন বাংলা গীতিকবিতার বাহুল্য ঘটেছে বাংলা মুলুকের খারাপ জলবায়ুর কারণে। (চট্টোপাধ্যায় ১৯৯৫: ২৫৬-৫৯)
শামসুর রাহমানও মনে করেন আবুল হাসানের কবিতা এলোমেলো কারণ তাঁর জীবন এলোমেলো। (হাসান ১৯৯৪: ৭-৮) এক সময় হুমায়ুন কবিরও এই জাতীয় সরল মতই প্রচার করেছিলেন। (কবির ১৯৭০) বলা বাহুল্য নয়, এই জাতীয় মতের লগে কার্ল মার্কসের মতের কোনো মিল নাই। বঙ্কিমচন্দ্র সাক্ষী, এই সব আবর্জনা আগুস্ত কোঁতের।
এই কবিতার সাহায্যে আমরা দেখাতে চাই প্রথম বই প্রকাশের সময়ই পরিণত কবি আবুল হাসান।
শামসুর রাহমান আরো বলেছেন: ‘পৃথক পালঙ্ক’ বইটির আগ পর্যন্ত আবুল হাসান পরিণত হয়ে ওঠেন নাই। আমরা নিবেদন করছি, কথাটি ঠিক নয়। রাজা যায় রাজা আসে বইয়ের এক নম্বর কবিতা ‘আবুল হাসান’ আমাদের সাক্ষী। এই কবিতার সাহায্যে আমরা দেখাতে চাই প্রথম বই প্রকাশের সময়ই পরিণত কবি আবুল হাসান। আমাদের প্রকৃত মতলব অবশ্য সেখানে নয়।
আমাদের প্রস্তাব আগেই উল্লেখ করেছি, ফ্রয়েডের আবিষ্কৃত ‘অজ্ঞান’ কথাটির অর্থ নির্ণয়। এতে আবুল হাসানের কবিতা থেকে ভালো সাহায্য পাওয়া যায়। এখানেই আমাদের মনোযোগ নিবদ্ধ থাকবে। ফাও হিসাবে, আবুল হাসান তরুণদের প্রিয় কেন—এই প্রশ্নেরও খানিক সুরাহা হবে। শামসুর রাহমানও আশা করি একদিন বুঝতে পারবেন আবুল হাসান তরুণদের প্রিয় নিতান্ত অসংলগ্ন এলোমেলো জীবনের কারণে নয়। তিনিই প্রিয় যিনি অজ্ঞান-জ্ঞানে জ্ঞানী। আবুল হাসান কি তা-ই? আমরা দাবি করছি, প্রস্তাবটি অনেক দূর পর্যন্ত সনির্বন্ধ।
২
ফ্রয়েডের আগ পর্যন্ত লোকে ‘অজ্ঞান’ বলতে জ্ঞানের অভাব বুঝত। এখন আমরা ‘অজ্ঞান’ বলতে বুঝি এক ধরনের জ্ঞান। এই ধরনের জ্ঞানের নাম ধরুন অ-এর জ্ঞান। এখানে ‘অ’-কে অভাবের ইঙ্গিত হিসাবে গ্রহণ করলে আরো ভালো হয়।
অ-এর জ্ঞানকে সংক্ষেপে অজ্ঞান বলা যায়। সজ্ঞানের মতন অজ্ঞানেরও বিধি আছে। ফ্রয়েডের শ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার জাক লাকাঁ এই বিধি পুনরাবিষ্কার করেছেন। লাকাঁর ভাষায়, অজ্ঞান ভাষার বিধি অনুসারেই গড়া হয়। অজ্ঞান ও ভাষা এই দুই কথা প্রায় একই অর্থে বলা চলে। ভাষার গড়ন বুঝলে অজ্ঞানের গড়নও বোঝা হয়। অন্তত দাঁড়ায়। জাক লাকাঁর প্রস্তাব এই। ফ্রয়েডের দেওয়া একটি উদাহরণের সাহায্য নিয়ে আমরা বিষয়টি পরিষ্কারের চেষ্টা করব।
উনিশ শতকের শেষ দিকের কোনো একদিন একজন অপরিচিত সঙ্গী সমভিব্যাহারে তিনি ডালমাশিয়ার রাগুসা নামক স্থান থেকে হেরজেগোবিনার অজ্ঞাতনামা কোন এক স্থানে যাচ্ছিলেন। ইতালিতে কোথা থেকে কোথায় যাওয়া যায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল। আলোচনার এক পর্যায়ে সঙ্গী ভদ্রলোকটিকে ফ্রয়েড জিজ্ঞেস করেন তিনি কোনোদিন অর্ভিয়েতো নামক জায়গায় গেছেন কি না আর সেখানে অমুকের আঁকা বিখ্যাত ফ্রেসকোগুলো দেখেছেন কি না। অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও ফ্রয়েড শিল্পীর নামটি স্মরণ করতে পারলেন না। পরে এক সময় সঠিক নামটি যখন অন্য কেউ উচ্চারণ করল তখন ফ্রয়েড ঠাহর করতে পারলেন শিল্পীর নাম সিনোরেল্লি (Signorelli)।
অর্ভিয়েতো শহরের ক্যাথিড্রালে আঁকা ‘চার শেষ কথা’—মানে মৃত্যু, শেষ বিচার, দোজখ ও বেহেশত—নামক ফ্রেসকো চিত্রের রূপকারের নাম সিনোরেল্লি। সেই নামটি কিছুতেই ফ্রয়েডের মনে পড়ছিল না। পরিবর্তে কেবল মনে আসছিল অন্য দুটি নাম—একটি বত্তিচেল্লি (Botticelli), আরেকটি বলত্রাফিও (Boltraffio)। ফ্রয়েড কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই জানেন শেষের নাম দুটি সঠিক নয়। ফ্রয়েড এই ঘটনার বিশ্লেষণ করেছেন। চুলচেরা বিচার বলে বাংলায় একটা কথা আছে। কথিত আছে, সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধও চুলচেরা বিচার পছন্দ করতেন না। আমাদের বিশ্বাস ফ্রয়েডের বিচারে স্বয়ং বুদ্ধও রাগ করবেন না।
সিনোরেল্লি সম্পর্কে ইতঃপূর্বে ফ্রয়েড বিশদ জানতেন না। শুদ্ধ জানা ছিল তিনি মিলান ঘরানার শিল্পী। তবে যেই দুটি নাম বারবার ফ্রয়েডের মনে আসছিল সেই বত্তিচেল্লি কিংবা বলত্রাফিওর চেয়ে প্রকৃত নামটি তাঁর বেশি জানা ছিল—এই কথাও বলা যাবে না। তবে কেন এমন হলো? এই রকম ঘটনা হরহামেশা ঘটে। ঘটে সকলের অভিজ্ঞতায়। এখানে কী বিশেষ আছে?
ফ্রয়েড বিচারে বসলেন। দেখলেন যেই মুহূর্তে তিনি নামটি মনে আনতে পারছিলেন না, তার আগ মুহূর্তে তারা দুজন অন্য একটি বিষয় নিয়ে আলাপ করছিলেন। অর্ভিয়েতোর প্রসঙ্গ তোলার আগে তারা দুজন আলাপ করছিলেন বসনিয়া এবং হেরজেগোবিনায় যেই সব তুর্কি মুসলমান বসবাস করেন তাদের কিছু আচার ও সংস্কার নিয়ে। ফ্রয়েড শুনেছিলেন বসনিয়া হেরজেগোবিনার তুর্কি মুসলমানরা খুবই ভাগ্যবাদী এবং ডাক্তারের উপর তাদের অগাধ বিশ্বাস। ফ্রয়েডকে এই কথা বলেছিলেন তাঁর একজন চিকিৎসক বন্ধু। সেই কথা তিনি হেরজেগোবিনা পথের সঙ্গীকে শোনচ্ছিলেন।
ফ্রয়েড শুনেছিলেন ডাক্তার যখন কোনো রোগীকে জবাব দিয়ে দেন, তখন তারা বলেন: ‘হের (সাহেব), আমরা আর কী বলব? ওকে যদি বাঁচানো যেত তো, আমরা বিশ্বাস করি, আপনি ওকে অবশ্যই বাঁচাতেন।’ এই বাক্য কয়টার ভিতর—ফ্রয়েড খেয়াল করলেন—‘বসনিয়া’, ‘হেরজেগোবিনা’ এবং ‘হের’ এই তিনটি শব্দ ও পদ (নাম) হাজির। এই পদগুলোর সঙ্গে সিনোরেল্লি এবং বত্তিচেল্লি-বলত্রাফিও জুটির কী যেন একটা সমিতি আছে।
মৃত্যুর সঙ্গে কামের সমিতি আছে।
ফ্রয়েড অনুমান করেন বসনিয়ার তুর্কি জনগণের আচার বিষয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে তাঁর মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়। অথচ আলোচনা তারপরও গড়ায়। পরে ফ্রয়েডের মনে পড়ে তিনি আরো একটি ঘটনা নিয়ে আলাপ করতে চাইছিলেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে একজন অপরিচিত লোকের সঙ্গে আলাপ অসমীচীন মনে হওয়ায় সেই প্রসঙ্গ চেপে যান। প্রথম প্রসঙ্গ অর্থাৎ মৃত্যুর কাছে হার মানার সঙ্গে দ্বিতীয় প্রসঙ্গটির সমিতি আছে। বসনিয়ার তুর্কি সমাজ—ফ্রয়েড শুনেছেন—কাম চরিতার্থ করার উপর অন্য কোনো জীবনসত্য আছে বলে মানে না। ডাক্তার বন্ধু বলেছিলেন, বসনিয়ার মুসলমানরা বলে, ‘হের, আপনে জানেন ঐটাই যদি ফুরায়ে গেল তো জীবনের আর কী বাকি থাকল?’ কথাটি একজন অপরিচিতের সঙ্গে আলাপের উপযুক্ত কথা নয়। শুদ্ধ কি তাই? মৃত্যুর সঙ্গে কামের সমিতি আছে। ফ্রয়েড দেখলেন সেই মুহূর্তে ওই সমিতিরও স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিলেন তিনি। ওই জায়গায় খুব সম্ভব আরো এক ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার নাম ‘সরা’। ধরাকে সরা জ্ঞান করা বলতে যেই সরা বুঝি সেই সরার কথাই বলছি। এই সরা মানে যাহা সরে যায়।
কয়েক সপ্তাহ আগে ফ্রয়েড ত্রাফয় (Trafoi) নামক এক জায়গায় ছিলেন। সেখানকার এক খবর এখনো ফ্রয়েডের মনে জাগরূক। তাঁরই চিকিৎসাধীন এক রোগী সেখানে আত্মহত্যা করে। এই রোগীর রতিশক্তিতে ব্যাঘাত ঘটেছিল এবং সেই আঘাতের চিকিৎসা সফল হয় নাই। ফ্রয়েড বলেছেন, হেরজেগোবিনা যাত্রাপথে হয়তো এই ঘটনা এবং তার আশেপাশের সব কথা আমার সজ্ঞানে মনে পড়ে নাই, এ কথা আমি জানি। তবে ‘বত্তিচেল্লি’ আর ‘বলত্রাফিও’ নাম দুটির সমিতি (association) আছে বলেই হয়তো আমার অজ্ঞানে এই দুই নাম এক জায়গায় এসেছিল।
অতএব, তিনি সিদ্ধান্ত করলেন, সিনোরেল্লি নাম ভুলে যাওয়া নিতান্ত দৈব নয়, মানবিক ঘটনা। তিনি ত্রাফয় নামটি মনে করতে চাইছিলেন না, অথচ স্মরণ করতে চেষ্টা করছিলেন সিনোরেল্লি নাম। ফ্রয়েডের মতে তাঁর সজ্ঞান ইচ্ছাটা পুরাপুরি সফল হয় নাই। একটা বিষয় দমন করার ইচ্ছা অন্য একটা বিষয় স্মরণ করার অক্ষমতা আকারে দেখা দিয়েছিল। যা দমন করতে চাই, তা স্মরণ করতে যদি অক্ষম হই তো বলা যেত বিষয়টি সহজ। কিন্তু ঘটনা এখানে ততটা সহজ ছিল না।
ফ্রয়েড দমন করতে চেয়েছিলেন কামের কথা। কামের সঙ্গে সমিতিবদ্ধ মৃত্যুর কথাও দমন করা তাই সঙ্গত তাঁর জন্য। বসনিয়া, হেরজেগোবিনা এবং ত্রাফয়—এই তিনটি নামের সাথে কাম ও মৃত্যুর কথা জড়িত। তিনি স্মরণ করতে চাইছিলেন শিল্পীর নাম সিনোরেল্লি। এই নাম বদলে তাঁর মনে উদিত হলো অন্য দুই নাম, বত্তিচেল্লি ও বলত্রাফিও। কিভাবে ঘটল? সিনোরেল্লি নামের দুই ভাগের এক ভাগ এল্লি (elli) অন্য দুই নামের এক নামেও আছে। অন্যভাগ সিনোর (signor) এর জর্মান ভাষার অনুবাদ করলে হয় হের (Herr)। ফলে যেই নাম মন দমন করেছে সেই হেরজেগোবিনার অংশ হিসাবে তিনি ‘সিনোর’ অংশটি ভুলে গেছেন।
‘সিনোরেল্লি’ নামের জায়গায় কী করে ‘বত্তিচেল্লি’ বা ‘বলত্রাফিও’ নাম দুটি ভেসে এল তার রহস্য সজ্ঞানে পাওয়া যায় না। কিন্তু ভাষায় পাওয়া যায়। এই ভাষার গড়নই কি অজ্ঞানের গড়ন? ফ্রয়েড দেখাচ্ছেন কাম ও মৃত্যু দমনের সঙ্গে কিন্তু ত্রাফয় দমন হলো না। এই দমন না হওয়ার ফল বলত্রাফিওর শেষাংশ। সিনোর শব্দের তর্জমা ‘হের’ দমিত হয়েছে কিন্তু হেরজেগোবিনার সঙ্গে যুক্ত বসনিয়ার ‘ব’ অংশটি মনে থেকে গেছে। সেটাই বত্তিচেল্লি ও বলত্রাফিওর প্রথম অংশ রূপে হাজির হয়েছে। শব্দাংশের সঙ্গে শব্দাংশের (বা প্রকৃত প্রস্তাবে অক্ষরের) এই সমিতি দিয়ে ফ্রয়েড নিজেকে বুঝ দিলেন কেন সিনোরেল্লি নামটি তাঁর যথাসময়ে মনে পড়ে নাই। এই ঘটনার নীতিসার কী? আমরা সজ্ঞানে যা দমন করতে চাই, তাও পুরাপুরি স্মরণ করতে পারি না। আমাদের স্মরণে অক্ষমতাও এক ধরনের সক্ষমতা বা এক জাতীয় সাফল্যই। এই ‘ব্যর্থ সফলতা’ বা এই ‘অক্ষম সক্ষমতা’রই অপর নাম অজ্ঞানের সফলতা বা সক্ষমতা। অজ্ঞান আছে। তবে আছে অক্ষমতা বা ব্যর্থতা আকারে। (ফ্রয়েড ১৯৬৫: ১-৭)
অজ্ঞানের প্রমাণ তার প্রকাশে। প্রকাশ মানে পদ। পদই পদার্থ তৈরি করেন। অজ্ঞান দেখা দেন।
ফ্রয়েডের এই আবিষ্কার অনুসারে জাক লাকাঁ আরো দেখিয়েছেন অজ্ঞানের থাকা না থাকা আমার বা আপনার চাওয়া না চাওয়ার ব্যাপার নয়। তবে অজ্ঞানের প্রকাশ এই থাকা না থাকার উপর নির্ভর করে। অজ্ঞানের প্রমাণ তার প্রকাশে। প্রকাশ মানে পদ। পদই পদার্থ তৈরি করেন। অজ্ঞান দেখা দেন।
৩
জাক লাকাঁ দেখিয়েছেন, কোনো প্রকার অভিজ্ঞতার আগেই—আমি বা আপনি ব্যক্তি হয়ে ওঠার আগেই—আমরা ভাষার অধীন। কোনো প্রকার মানব-সম্পর্কের আগেই কতক কতক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত। যেমন দিন ও রাত্রি, সকাল ও বিকাল, চাঁদ ও তারা, আকার ও পৃথিবী। এদের বৈপরীত্য বা পার্থক্য দেখে জীব অনুমান করে এরা আলাদা। এটাই প্রথম পদ।
লাকাঁ দেখেন: প্রকৃতি পদ যোগায়, এই পদগুলি মানব সম্পর্ক গড়ে নেয় শূন্য থেকে সম্ভব করার মাধ্যমে, সম্পর্কের রূপ ও আকৃতি পদ থেকেই আসে। (লাকাঁ ১৯৯৮: ২০)
লাকাঁ বলেন, যেই জীব চিন্তা করে, যেই জীব জানে সে এই সকলের বা এই পরমের অংশ মাত্র, তার জন্মের আগেই তার শুমারি হয়ে গেছে। যে শুমার করতে এসেছে সেও বেশুমার নয়, তারও শুমারি হয়ে আছে। সেখানে এই যে জীবশুমারি তার নামই অজ্ঞান। বিশদ করার দরকার আছে কথাটার।
কোনো এক বামন বলে—আমরা তিন ভাই: পল, এর্নেস্ত ও আমি। যে বলছে সেও এই হিসাবের ভিতরে আছে। কিন্তু যে বলছে সে কে? আমি যে শুনছি সে একজন। কিন্তু পল ও এর্নেস্তের সঙ্গে যেই আমি গুনিত (শুমার) হচ্ছে সে অন্যজন—এই বোধ প্রথমে আসে না। আসে খানিক পরে। আমাদের যুগে—ভাষা বিশ্লেষণ খানিকটা এগুনোর পর—দেখা গেল আমি যে একই সঙ্গে গণক এবং গণিত এই সত্যের সঙ্গে অজ্ঞানের সমিতি আছে। ‘আমি’ পদের সঙ্গে ‘আমি’ পদার্থের যে একটা ফারাক আছে, গণনাকার ‘আমি’ ও আমার গণিত অপর দুই ভাইয়ের মতন তিন নম্বর ভাই ‘আমি’ যে আলাদা সেটা আমরা ভাষার গুণেই টের পাই। এই কালের ভাষাবিজ্ঞান সেই জ্ঞান আমাদের দিয়েছে।
ফ্রয়েডের সিনোরেল্লি কাহিনির চেয়েও এক কাঠি গভীর এই আমি ও আমি-শুমারির গল্প। অজ্ঞানের এই উদাহরণ থেকে এক নতুন খবর আমরা পাই। সেই খবর অনুসারে যেই জীব চিন্তাশীল বা বাকশক্তিসম্পন্ন সেই জীব দ্বিধাবিভক্ত। ভাষা এই দ্বিধাবিভক্তির সাক্ষী।
আমি পদ না হলে আমি পদার্থ কিনা জানা যায় না। কিন্তু আমি পদেও আমি পদার্থ পুরাপুরি নাই। আমরা বলছি না যে আমি পদটি অপ্রকৃত বা অবাস্তব কিছু। শুদ্ধ বলছি আমি পদ আমি পদার্থের সবকিছুকে প্রকৃতিস্থ করে নাই বা বাস্তবায়িত করে নাই। এর ভিতর কিছু একটা ভূমিষ্ঠ হয় নাই। এই অভূমিষ্ঠ বস্তুর নামই অজ্ঞান। দমনকার ও উৎপীড়ক কিছু একটা যে এই এলাকায় ফেলে দেয় তাতে বিস্ময়ের কী আছে? লাকাঁ বলেন: গর্ভপাতকারীর সঙ্গে ভ্রূণঢাকা বস্তার যেই সম্পর্ক তাকেই দমন বলে। (লাকাঁ ১৯৯৮: ২৩)
ফ্রয়েড অজ্ঞান প্রথম আবিষ্কার করেন এই দমনের মধ্যেই। আরো সঠিকভাবে বলা যায়, করেন দমনে ব্যর্থতার মধ্যে। যে জন্মাতে চেয়েছিল, সে অজাত থেকে গেছে—এটা তো ব্যর্থতাই। এই ব্যর্থতারই প্রকাশ স্বপ্নে, মুদ্রাদোষে, মুখ-ফস্কানো কথায়; হাসি-তামাশায়। এখানেই ফ্রয়েড প্রথম অজ্ঞান খুঁজে পান। জাক লাকাঁ মন্তব্য করেন অজ্ঞান খুব সাধারণ, ভালোবাসা অসাধারণ জিনিস। ভালোবাসা বিস্ময়কর নয়, সেই অর্থে সাধারণ, কিন্তু অজ্ঞান বিস্ময়কর, সেই অর্থে অসাধারণ। তবে ভালোবাসার পাত্রপাত্রী যেই রকম অনন্য, একক বা আহাদ, অজ্ঞানের কুশীলব তেমন নয়, তারা নিত্য ও সাধারণ। অজ্ঞান বারবার পাই আর বারবার হারাই। ভালোবাসা একবার পাই তো কোনোদিন হারাই না।
অজ্ঞানের প্রথম জ্ঞান ভাষার মধ্যে।
অজ্ঞানের প্রথম জ্ঞান ভাষার মধ্যে। ভাষাই খবর দিচ্ছে, ভাষার বান্দা বা পরমের জীব (subject) দুই খণ্ড হয়ে আছে: এক খণ্ডের নাম পদ (signifier), আর খণ্ডের নাম পদার্থ (signified)। এখানে পদের জন্ম এবং পদার্থের জন্ম যুগপৎ।
পদ বিনা পদার্থ নাই। আবার পদার্থেরও কী একটা যেন পদের মধ্যে নাই—প্রকৃতিস্থ (বা বাস্তবায়িত বা জাত) নাই। যা নাই তারই নাম অভাব। এই অ-এর ভাবই বাসনা। যেই জিনিসটা হারিয়ে যায় তা অর্ভিয়েতোর গির্জাঘরের শিল্পীর নাম হারিয়ে যাওয়ার মতন নয় কি?
যা হারিয়ে যায় তা কী? জাক লাকাঁ বলেন: সিনোরেল্লি নামের যেই অংশ হারিয়ে গিয়েছিল তার অর্থ ‘সিনোর’, ‘হের’ অর্থে প্রভু বা পরম। এই মৃত্যুচিহ্নিত পৃথিবীতে পরমের অপর নাম মৃত্যু। ফ্রয়েড সেই দিন হেরজোগোবিনার পথে হের অর্থাৎ মৃত্যুকেই ভুলে বসেছিলেন। কিন্তু মৃত্যু তো হারায় না। সিনোরেল্লিও ফিরে আসে। লাকাঁ বলেন, ‘এর মধ্যে কি আমরা দেখছি না সেই জিনিসের জন্ম হচ্ছে যা ফ্রয়েডকে মৃতের পুরাণে নিজেরই বাসনার বিধি আবিষ্কার করতে বাধ্য করেছে?’ (লাকাঁ ১৯৯৮: ২৭)
নিৎশে বলেছিলেন, প্রভু এন্তেকাল করেছেন। প্রকৃত প্রস্তাবে এই ঘোষণাও একই কারণে, বাসনার বিধি আবিষ্কারের প্রয়োজনে। লাকাঁর মতানুসারে, নিৎশে শুদ্ধ খতনার (castration) বিরুদ্ধে আশ্রয়লাভের জন্যই প্রভুর ওফাত পুরাণ লিখেছিলেন। প্রভু মৃত নন, তিনি অজ্ঞান মাত্র। ফ্রয়েডের যজমান যেই কারণে আত্মহত্যা করেছিলেন, নিৎশেও অনেকটা সেই কারণেই প্রভু-হত্যা করেছিলেন।
শেষ কথা, যেখানেই জীব দ্বিখণ্ডিত, পদ ও পদার্থের যেই মাঝখানটিতে ফোকর সেখানেই অজ্ঞানের আবির্ভাব। এই অজ্ঞানকেই ফ্রয়েড বাসনার বাসভূমি মনে করেন। অজ্ঞান, বাসনা ও বান্দা (বা জীব) একই ঘটনার তিন কোণ মতো। এই বাসনাই আমরা দেখতে পাই আর এক জায়গায় গিয়ে হাজির হয়। বিস্মৃত সিনোর বা হের পরিস্মৃত হয় বসনিয়া বা বত্তিচেল্লি বা বলত্রাফিওর ব আকারে। অজ্ঞানের এই বিধিরই নাম নামান্তর বা মেটোনিমি (metonymy)।
বান্দা হতবাক এই ঘটনার আশ্চর্য প্রকাশে। জীবনের শেষ নাগাদ ফ্রয়েড স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন: নারী কী চায়? নারীর বাসনা কী?—এই প্রশ্নের সদুত্তর তাঁর কোনোদিনই জানা হয় নাই। ফ্রয়েড প্রকৃত প্রস্তাবে স্ত্রৈণ (axorius) প্রকৃতির মানুষ ছিলেন—এ কথা জানিয়েছেন তাঁর বিজ্ঞ জীবনচরিতকার মহাশয় এর্নেস্ত জোনস। এর মূলও আছে পরম বা পিতার সঙ্গে ফ্রয়েডের সম্পর্কের অন্দরে।
৪
‘আবুল হাসান’ পদ ও ‘আবুল হাসান’ পদার্থেও ভেদ আছে। ‘আবুল হাসান’ কবিতা ‘আবুল হাসান’ সম্পর্কে লিখছেন আবুল হাসান। শুমার করছেন আবুল হাসান, শুমারিও হচ্ছে আবুল হাসানের। এই পদ—এই নাম—কোন পদার্থের? আমরা প্রথমে দেখি একটার পর একটা রূপক, রূপকের পর রূপক। একটা রূপকের পর আর একটা রূপক আসছে স্রোতের মতন। এই প্রক্রিয়ার নাম নামান্তর। এই নামান্তর বাসনারই বিধি।
সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে, উজ্জ্বলতা ধরে আর্দ্র, মায়াবী করুণ
এটা সেই পাথরের নাম নাকি? এটা তাই?
এটা কি পাথর নাকি কোনো নদী? উপগ্রহ? কোনো রাজা?
পৃথিবীর তিনভাগ জলের সমান কারো কান্না ভেজা চোখ?
মহাকাশে ছড়ানো ছয়টি তারা? তীব্র তীক্ষè তমোহর
কী অর্থ বহন করে এই সব মিলিত অক্ষর?
(হাসান ১৯৯৪: ১৯)
এই নাম বা পদের মধ্যে বাসনা প্রকাশিত কিন্তু প্রকৃতিস্থ নয়। এর মধ্যে সিনোর, হের, প্রভু, পরম বা পিতা হারিয়ে গেছেন। পিতা অজ্ঞান, মোটেও মুর্দা নন তিনি। জীবের অজ্ঞান পরম। আবুল হাসান ফ্রয়েড বা লাকাঁ পড়েছেন কি না সেই প্রশ্ন অজ্ঞানের নয়। অজ্ঞানের জীব আবুল হাসান অবলীলায় লিখেছেন নাম-রহস্য কী বিজ্ঞান!
আমি বহুদিন একা একা প্রশ্ন করে দেখেছি নিজেকে,
যারা খুব হৃদয়ের কাছাকাছি থাকে, যারা এঘরে ওঘরে যায়
সময়ের সাহসী সন্তান যারা সভ্যতার সুন্দর প্রহরী
তারা কেউ কেউ বলেছে আমাকে—
এটা তোর জন্মদাতা জনকের জীবনের রুগ্ন রূপান্তর,
একটি নামের মধ্যে নিজেরি বিস্তার ধরে রাখা,
তুই যার অনিচ্ছুক দাস!
(হাসান ১৯৯৪: ১৯)
আমরা কখনো জীব, কখনো বান্দা বলে যেই ভাব প্রকাশ করছি—ইংরেজি ভাষা যাকে ‘সাবজেক্ট’ বলতে রাজি—তা-ই কি পদ আবুল হাসানের ‘অনিচ্ছুক দাস’ নয়? ‘আবুল হাসান’ এরই অনিচ্ছুক দাস। পদার্থ পদের দাস। এই সত্য অজ্ঞানের বিধি থেকে জন্ম নেয়। কিন্তু এই নাম ‘জন্মদাতা জনকের জীবনের রুগ্ন রূপান্তর’ কেন? জন্মাদাতা কে এই নামের? ভাষাই জনক। ভাষার জীবন কী? তার রূপান্তর অর্থ ইংরেজিতে থাকে বলে মেটাফর (metaphor) তাই নয় কি? এই রূপান্তর রুগ্ণ কেন?
নিৎশে যখন প্রভুর এন্তেকাল বার্তা ঘোষণা করেন, ফ্রয়েড যখন সিনোরেল্লির এস্তেমালে ব্যর্থ হন, তখন তারা রুগ্ণ রূপান্তর বা ক্যাসট্রেশনের (castration) বিরুদ্ধে বর্ম পরিধান করেছেন মাত্র। কিন্তু তাঁরাও জানেন না, পিতা অমৃত—কথার অর্থ ‘পিতা মারা যান নাই’ করা যাবে না, করতে হবে ‘পিতা অ-এর মৃত, সংক্ষেপে অজ্ঞান মাত্র’। আবুল হাসান ব্যাপারটা আমল করেছেন। ‘অমৃতস্য পুত্রাঃ’ তারই সত্য স্বরূপ।
অজ্ঞান দরজাময়—এই দরজাময়তাকেই বাংলায় বলে কাম।
অজ্ঞানকে শেষ পর্যন্ত বোঝাপড়া করতে হয় প্রকৃতির সাথে। তাকেও হতে হয় প্রকৃতিস্থ। এইখানে প্রকৃতি অর্থে ইংরেজি রিয়েল (real) বুঝতে হবে, নেচার (nature) বা স্বভাব নয়। অজ্ঞান প্রকৃতির দরজায় টোকা দিয়ে জন্ম নেয়। দরজা কথাটা ফকির লালন শাহ যেই অর্থে ব্যবহার করেছেন আমরাও হুবহু সেই অর্থেই জারি রাখছি। এই দরজার তর্জমা ইংরেজিতে ড্রাইভ (drive), জর্মানে ট্রিয়েব (Trieb) এবং ফরাসিতে পুলসিওঁ (pulsion)। পদ ও পদার্থে, জীব ও পরমে, আমি ও তুমিতে ফাঁক আছে। তেমনি ফাঁক আছে কায়ায়—চোখে, ঠোঁটে, কানে, নাভিতে, পায়ুতে—এই ক্রমে নয়খানে। অজ্ঞান দরজাময়—এই দরজাময়তাকেই বাংলায় বলে কাম। আজকাল ইতরজন এর বিশেষ নাম যৌনতা দিয়ে এর মর্ম শেষ করেছে। ‘যুবতীর বাম হাতে পাঁচটি আঙুল’ কামময়। এই আঙুলও বাসনার দরজা। দরজা অর্থ নিছক ইন্দ্রিয় নয়। দরজা সব সময়ই ভাষাবাহিত। এখানে পদের কথা উঠেছে। ইন্দ্রিয় যখন পদ হয়, তখনই তা দরজা। পদ নয় এমন পদার্থ নাই—তাই তা দরজা নয়।
অজ্ঞানের দরজাকে জাক লাঁকা গ্রিক পুরাণে বর্ণিত অর্ফিয়ুস কর্তৃক ইউরিদিকে হারানোর ঘটনার তুলনা করেছেন। ফিরে তাকালেই সে নাই। অজ্ঞানকে জানা মাত্রই সে হারায়। আবুল হাসানের শেষ অনুচ্ছেদ এই সত্যেরই সাক্ষী।
হয়তো যুদ্ধের নাম, জ্যোৎস্নায় দুরন্ত চাঁদে ছুঁয়ে যাওয়া,
নীল দীর্ঘশ্বাস কোনো মানুষের!
সত্যিই কি মানুষের?
তবে কি সে মানুষের সাথে সম্পর্কিত ছিল, কোনোদিন
ভালবেসেছিল সেও যুবতীর বামহাতে পাঁচটি আঙ্গুল?
ভালবেসেছিলো ফুল, মোমবাতি, শিরন্ত্রাণ, আলোর ইশকুল?
(হাসান ১৯৯৪: ১৯)
মানুষের নাম সত্যি মানুষের কীর্তি কি না এই প্রশ্ন অত্যন্ত নগদ, মোটেও বকেয়া বা বাকি নয়। প্রকৃতিই পদ সরবরাহ করে, মানুষ তৈরি করে তার পদার্থ। কিন্তু মানুষ কোন পদার্থের নাম? ফুল, মোমবাতি, শিরস্ত্রাণ, আলোর ইশকুল এগুলো কী? এগুলো পদ না পদার্থ? তা হলে পদের হাত থেকে পরিত্রাণ কোথায়? পরিত্রাণ বাসনার বিধিতে। ফুল থেকে মোমবাতিতে, শিরস্ত্রাণ থেকে আলোর ইশকুলে। জাক লাকাঁ কহেন: বান্দার কথা এক পদ বলে অন্য পদকে, অন্য বান্দাকে না। (লাকাঁ ১৯৯৮: ২৪৭)
মিলিত অক্ষর শুদ্ধ বহন মাত্র করে না, অর্থ সৃষ্টিও করে। অতএব দাঁড়াল কী? দাঁড়াল এই। পদ থেকে পদান্তরে অভিসার ছাড়া বান্দার ত্রাণ নাই। এই সত্যে সন্দিহান যাঁরা তাঁরাই সিদ্ধার্থ গৌতমের নামে প্রচার করেছেন, বাসনার নাম নির্বাণ। আমরা এর অর্থ করি অন্য। পরমের বাসনা অনির্বাণ। বাসনা অমর, অ-এর মরা, অজ্ঞানের শহিদ। শুদ্ধ নামেই তার মুক্তি। একমাত্র নামের, পদের বা ভাষার দোহাইতেই জীব পরমের অংশ। আবুল হাসানের শেষ প্রশ্নের উত্তর এখানেই মেলে : মানুষের সঙ্গে সে নিশ্চয়ই সম্পর্কিত ছিল একদিন। ইহুদি পুরাণে আছে : আল্লাহ হযরত আদমকে প্রথমে সকল বস্তুর নাম শিক্ষা দিলেন। এই শিক্ষা তিনি ফেরেশতাদের দেন নাই।
নাম থাকা ভালো। কিন্তু নামে যারা খুব ভালো তাদের দশা ফ্রয়েডের মতন হয়। তারা স্ত্রৈণ, কিন্তু স্ত্রী কী ভাব তা তারা জানেন না। আবুল হাসানের অজ্ঞানেও তার ইঙ্গিত আছে। অজ্ঞানের মার—শেষ পর্যন্ত স্বীকার করতে হবে—শেষ রাতে।
সেই আলোচনা আজ নয়। আমার মোমবাতিও ফুরিয়ে এসেছে।
দোহাই
১. হুমায়ুন কবির, বাঙলার কাব্য, আহমদ ছফা সম্পাদিত (ঢাকা, ১৯৭০)।
২. সলিমুল্লাহ খান, ‘কাজী নজরুলের অজ্ঞান’, যুগান্তর (ঢাকা, ২৯ আগস্ট ২০০৩)।
৩. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নির্বাচিত রচনা, ভবতোষ দত্ত সম্পাদিত (নতুন দিল্লি, ১৯৯৫)।
৪. রামমোহন রায়, রামমোহন গ্রন্থাবলী, ১ম—৭ম খণ্ড, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত (কলকাতা, ১৩৮০)।
৫. আবুল হাসান, আবুল হাসান রচনা সমগ্র (ঢাকা, ১৯৯৪)।
৬. Sigmund Freud, The Psychopathology of Everyday Life, A. Tyson, trans. (New York, 1965).
৭. Jacques Lacan, The Four Fundamental Concepts of Psychoanalysis: The Seminar of Jacques Lacan, Book XI, A. Sheridan, trans. (New York, 1998).
উৎস
যুগান্তর ॥ ঢাকা ২০০২
কবি আবুল হাসান: মূল্যায়ন ॥ ঢাকা, ২০০৬
(সূত্র: সলিমুল্লাহ খান, আমি তুমি সে, জাক লাকাঁ বিদ্যালয়, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৭০-৭৯।)
সলিমুল্লাহ খান
জন্ম : ১৮ অগাস্ট ১৯৫৮, কক্সবাজার।।
গুরুত্বপূর্ণ বই : ‘আদমবোমা’ (২০০৯), ‘আহমদ ছফা সঞ্জীবনী’ (২০১০),
‘স্বাধীনতা ব্যবসায়’ (২০১১), ‘আল্লাহর বাদশাহি’, ২য় সংস্করণ, (২০১২)।।
ই-মেইল : salimullah.khan@ulab.edu.bd
Latest posts by সলিমুল্লাহ খান (see all)
- আহমদ ছফার ট্রাউয়ারস্পিয়েল - June 29, 2018
- বাংলা সাহিত্যে রতি ও বিরতি : জীবনানন্দ দাশের একটি কবিতা প্রসঙ্গে - May 30, 2018
- আবুল হাসানের অজ্ঞান - December 27, 2017