
মধ্যরাতের পোড়া মাংস
❑
আমার মৃত্যুঘণ্টি ছিনিয়ে
ছুটতে ছুটতে ইঁদুর ঢুকে পড়ল গর্তে
টর্চ তাকে খুঁজতে লাগল
হাঁটু ফেটে যাওয়া এক বালকের রক্তে
চমকে উঠল আলো
সাদাস্রাবে ভেসে ওঠা কানিছেঁড়ায়
চমকে উঠল আলো
আগড়ার ফাটা যোনির ভেতর শূন্যে
চমকে উঠল আলো
আরও গভীরে এক বোধশূন্য হাঁড়ি উদোম
নেচে চলেছে নেচে চলেছে নেচে চলেছে
কিন্তু আলো ততদূর যেতে পারল না
২.
জলের উপর পাথর ভাসানো খেলা
আমি আর খেলতে পারি না
খুঁড়তে পারি না পাঁকের গভীরে
মাছের মরণকূপ
অথচ এই আমি রাবণের হাসি হাসতাম
হনুমান সেজে সাগর ডিঙাতাম উলফায় উলফায়
পেয়ারাসম্রাট উপাধি পেয়ে
বাদলদিনের দুপুরবেলা চিচিংফাঁকে নামতাম!
কোনো এক আলো আমার পেছন থেকে
খেতে শুরু করেছিল আমাকে আর—
ক্ষতস্থান থেকে বেরোনো বদগন্ধ
ছড়িয়ে গিয়েছিল স্বপ্নে… ঘুমে
এমন আঁশটে গন্ধে আমার বমি হয়—
বমির সঙ্গে বেরোয় আরও হাজার জটিল
বদবু—হয়তোবা বীর্যপোড়া, কিংবা…
৩.
সরষে খেতের ভেতর দিয়ে ছুটতে ছুটতে
আমরা আমদের চেনা শত্রু আর
অশ্লীল শব্দ ওড়াতাম
শত্রুরা লুটিয়ে পড়ত মাটিতে আর
আকাশে ভাসমান অশ্লীল শব্দরা
টা টা বাই টা টা বাই করত আমাদের
বিশাল আকাশের ভয়ানক চোখ থেকে
ঝরে ঝরে পড়ত সরষে ফুল
মন আটুপাটু করা গন্ধে আমরা
হারিয়ে ফেলতাম পথ
একদিন মাঝখেত থেকে আবিষ্কার
করা হলো আমাদের ঘুমন্ত বডি আর
মুঠোভর্তি হলুদ মৃত্যুলিপি…
৪.
খেলতে খেলতে একদিন আগুনে
শিকার পোড়ানোর খেলাও শিখলাম
পকেটে থাকত নুন আর কাঁচা লঙ্কা
বুড়ো অশ্বত্থগাছ কাঁপা কাঁপা গলায়
আমাদের বোঝাতেন আদিমচর্চা
আর আমাদের মাথা নিয়ে
এক্কাদোক্কা খেলত
কাঁচা কাঠের ধোঁয়া
৫.
একদিন ঘুম থেকে উঠে আমি কেরোসিন খেলাম
আর ঘুমোতে যাবার সময় টিউবলাইট
এসবকিছুই আমাকে শিখিয়েছিল মিস্টার নাথু।
আরেকদিন মাটির তলায় দশ বাই পাঁচ ফুট গর্তে
ঢুকিয়ে মাটি চাপা দিতে দিতে বলল—
নির্বাসন শেখো, আত্মসন্ধান শেখো
প্রকৃত আড়ালে, নির্জন অন্ধকারে…
উদ্ভট জামা গায়ে, আজব সাইকেল নিয়ে
নাথু চলে গেছে
খেলা নিয়ে চলে গেছে কোনো এক
দূরতর অচেনাপুরে…
৬.
দিদির দুলে দুলে পড়া কবিতা
আমার দুলে দুলে শেখা ইতিহাস
আমি ভুলে গেছি
শুধু মনে পড়ে—
দুলেছি
এইসব মনে পড়ার ভেতরে
আগুন নেই
নেই সেই মাঘ-পূর্ণিমার চাঁদ
যাকে আমরা একদল বালক
ছোটাতে ছোটাতে
পুকুরে ফেলে পাকড়াও করেছিলাম
আর তাকে জল থেকে তুলে
বাঁশবাগানে বেঁধে
দে ছুট… আলোছুট… আমাদের শেষ পালানো
ভাঙা বেহালার প্রতি
❑
সব অপেক্ষার শেষে পড়ে আছে
ভাঙা বেহালা
উন্মাদ তারের আড়ালে
পড়ে আছে
সুরের ক্ষতবিক্ষত শরীর
যা কখনো বাজে না
যা কখনো বাজবে না
তারই খোঁজে চলে গেছে যন্ত্রী
বৃথা পাশ ফিরে শোওয়া
বৃথা তোমার সমস্ত উঁ আঁ…
ভ্রমণ
❑
নিজেদের কাহিনি লিখবে বলে
হরিণেরা ফিরে এল
কাহিনির শুরুতেই লেখা হল :
এককটি শতাব্দীতে
মাংসের দাম ও প্রয়োজন একেকরকম
রক্তের ঘ্রাণ ও ঘ্রাণ গ্রহণকারীর চরিত্র
সমানুপাতিক…
দেওয়ালে টাঙানো
আমাদের শিং—মানুষের সৌন্দর্যবোধ
খুলে নিতে এসেছি আমরা
আমরা ফেরত চাই
অরণ্যশ্রী… আত্মতৃপ্তি
উপমা থেকে
❑
ধরো এমন হলো
ব্যবহৃত সমস্ত উপমা থেকে বট
সরিয়ে নিল শেকড়
নিবিড় শান্তির ছায়া নিয়ে
চলল বটের দেশে
যেখানে পাখিরা উপমাহীন
ভালোবাসাবাসি করে
লাল বটফলের ভেতর থেকে
খুঁপে খুঁপে খেয়ে নেয় ভাষা
জন্ম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয়
একেকটি শব্দের
আর শব্দের পালকগুলি
উড়তে উড়তে
ভাসতে ভাসতে
কেড়ে নিল নক্ষত্রের হাসি
নীল মিটমিট
কৃষ্ণ মণ্ডল
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা : স্নাতকোত্তর। পেশা : অধ্যাপনা।
প্রকাশিত বই :
কথার সন্তান [কবিতা, নাটমন্দির, পুরুলিয়া, ২০১২]
আস্তাবল কিংবা সমুদ্রের খোঁজে [কবিতা, নাটমন্দির, পুরুলিয়া, ২০১৬]
ই-মেইল : krishnabccd@gmail.com
Latest posts by কৃষ্ণ মণ্ডল (see all)
- কৃষ্ণ মণ্ডলের কবিতা - June 1, 2017