
রঙ তুলির রহস্যময় রম্যভূমি কবি মাত্রেরই প্রিয়। চিত্রকলা, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, ভাস্কর্য, কবিতা—সবই একজন রসিক সৃষ্টিশীল মানুষের অপার বিচরণভূমি। রঙ থেকে রঙে, আলোছায়ায়, তার থেকে তারে, শব্দে সুরে অক্ষরে বিন্যাসে যা কিছু ঝংকৃত হয়ে ওঠে, চিত্রকল্পের ইশারায়, বোধে, চেতন-অবচেতনের গভীর স্তরে স্তরে। এইসবই তাই একত্রে আমাদের আলোচনার ও মনোযোগের অন্তর্গত হয়ে আছে।
কবি মণীন্দ্র গুপ্ত বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল প্রবীণ কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক। কবিদের মনোজগৎ নিয়ে আমার সাম্প্রতিক ছবিতে অংশ নিয়েছেন তিনিও। সেই সূত্রে ওঁর সাথে বেশ কিছুদিন কেটেছে আমার আড্ডায়, আলোচনায়। জন্ম বাংলাদেশের বরিশালে। নব্বই বছরের এই প্রাজ্ঞ মানুষটি আমাকে মুগ্ধ করেছেন তাঁর তারুণ্যে; এই বয়সেও তাঁর আন্তরিকতা, সারল্য, কৌতূহল, স্বীকারোক্তি, অন্বেষণ, ভাবনা! বলেছিলেন, সবকিছু নতুন করে ভাবতে হবে আবার, ভুলে যেতে হবে আমরা মানুষ; আমরা আসলে অন্য যেকোনো প্রাণীর মতোই। একটি কবিতায় লিখেছিলেন, ‘তুমি বহু প্ররোচনা দিয়েছিলে, তবু যে এখনো বেঁচে আছি, তার পবিত্র কারণ : সম্পূর্ণত আমিও মানুষ নই—পাখি সিংহ মক্ষিকা এমনকি কেঁচোর সমবায়—স্বপ্নে ওড়ি, ক্রুদ্ধ ফুঁসি, বাক্স ভরি, স্পর্শাতুর মাটিতে সেঁধুই।’
লেখা ছাড়াও সিনেমা, চিত্রকলা, ভাস্কর্য তাঁর প্রিয় বিষয়। শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজ-কে নিয়ে তাঁর বই রঙ কাঁকর রামকিঙ্কর। নিজের প্রায় সব বইয়ের প্রচ্ছদ তিনি নিজেই রচনা করেছেন। এঁকে দিয়েছেন পরিচিত অনেকের বইয়ের মলাটও। আমাকে একদিন দেখিয়েছিলেন তাঁর যৌবন বয়সের আঁকার খাতা। স্কেচ, ইঙ্ক ড্রয়িং, ডট পেনে আঁকা। ক্যানভাস কাগজের ওপরে কখনো জল রঙ, ওয়াশ ড্রয়িং। পঞ্চাশ বছর আগেকার আঁকা, নেপালি কাগজের ওপরে জলরঙ। পাতলা টিস্যু পেপারের মতো সেই কাগজের ওপরে নারীর মুখ, সবই প্রোফাইলে। বললেন, রবীন্দ্রনাথের মহুয়া কবিতায় আছে যে নারীদের কথা, তার অনুভব থেকেই ছবিতে এঁকেছেন এই ‘নাম্নী’ সিরিজ।
২০১৫ সালে তাঁর সঙ্গে গড়িয়ার বাড়িতে বিস্তর কথা হয়েছিল। কবিতা নিয়ে, জীবন নিয়ে, চিত্রকলা নিয়ে ওর সাথে অগোছালো আড্ডার অল্প কিছু অংশ এখানে রইল, সঙ্গে রইল তাঁর আঁকা পোস্টকার্ড সাইজের কিছু ছবির প্রতিলিপি :

কবিতা এখন ভালো হয় না, আসে না।
শংকর
এখানে, গড়িয়ার এই বাড়িতে, কতদিন আছেন?
মণীন্দ্র
প্রায় কুড়ি বছর হলো।
শংকর
তার আগে?
মণীন্দ্র
তার আগে হিন্দুস্থান পার্কের ভাড়া বাড়িতে। মজার ব্যাপার আছে, আমি যে বাড়িতে হিন্দুস্থান পার্কে ছিলাম ওটা হচ্ছে নন্দলাল বসুর বাড়ি।
শংকর
আচ্ছা?
মণীন্দ্র
নন্দলাল বসুর দুই ছেলে, একজন বিশ্বরূপ বসু, একজন গোরা বসু। বিশ্বরূপ বসুর ভাগটাতে আমরা ভাড়া নিয়ে ছিলাম।
শংকর
এই সেদিন আনন্দবাজারে দেখলাম নন্দলাল বসুকে নিয়ে একটা লেখায় ঐ বাড়িটার কথা আছে।
মণীন্দ্র
তাই?
শংকর
আপনার অক্ষয় মালবেরি কয়েকদিন আগেও পড়ছিলাম আবার। তার মধ্যে ফৌজি জীবন, লাহোরের সেই ফৌজি ছাউনির গল্প। দারুণ। ওটা কোন সময়ে লেখা?
মণীন্দ্র
লিখেছি এখানে এসে। প্রথম পার্টটা হিন্দুস্থান রোডের বাড়িতে, দ্বিতীয় পার্টও। তৃতীয়টা এই বাড়িতে।
শংকর
সবই স্মৃতি থেকে, নাকি ডায়েরি মেইনটেইন করতেন?
মণীন্দ্র
না আমি ডায়েরি রাখি নি। সব স্মৃতি থেকে। আমার কাছে সব পরিষ্কার এখনও।
শংকর
দারুণ!… আর কবিতা লিখছেন কিছু?
মণীন্দ্র
কবিতা লিখতে হয়। অনেকে চায়টায় তো। আসলে, কবিতা এখন ভালো হয় না, আসে না।
শংকর
হ্যাঁ, সেই তফাৎটা তো নিজে বুঝতে পারবেন।
মণীন্দ্র
হ্যাঁ, (হেসে) লোকেরা ভাবে একটা বুড়ো মানুষ, থাকা দরকার।
শংকর
হো হো হো…।
মণীন্দ্র
(হেসে) বুঝতে পারি।
শংকর
এখনকার কবিতা যা লেখা হচ্ছে… আপনার কি মনে হয় নতুন কিছু লিখতে পারা এখন…?
মণীন্দ্র
নতুন যদি ভেতরটা হয়, কিছু যদি স্ট্রাইক করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে লেখাটা নতুন হয়ে ওঠে। আমি লক্ষ করে দেখেছি কবিতা আসছে না আসছে না, হঠাৎ হয়তো কিছু একটা ঘটল, কয়েকটা কথা শুনলাম, কাগজে কোনো খবর দেখলাম, হঠাৎ বেশ একটা ঝিলিক দিয়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে লেখাটাও হয়, আর লেখাটা নতুনও হয়। আসলে যে লোকটা লিখছে সে নতুন হলো কিনা। আর, দিনে দিনে, ঘণ্টায় ঘণ্টায় আমরা নতুন হতে পারি। অথবা বছরের পর বছর আমরা পুরোনো হয়ে হয়ে হয়ে, মানে, সেই রাস্ট পড়ে যেতে পারি।
(কিন্তু) একা বুঝলাম আমার কবিতাটাকে, আর কেউ বুঝল না; তাহলে কি সেটা গণ্য করা হবে?
শংকর
ঠিকই। এখন কিভাবে সময় কাটে আপনার? কী করতে ইচ্ছে করে?
মণীন্দ্র
এখন গপ্পোটপ্পো করা, এই হাল্কা কথাবার্তা বলা…
শংকর
মানে খুব পরিচিত অন্তরঙ্গ কেউ হলে,… সেই রকম?
মণীন্দ্র
অপরিচিত হলেও আমার খুব অসুবিধে হয় না; পরিচিত হতে কতক্ষণ লাগে? মানে, একরকম মন হলে পরে তবে…
শংকর
হ্যাঁ, ওইটা হতে হয়।
মণীন্দ্র
এই যেমন আপনি বললেন যে নানারকম বাতিক আছে—আমার খুব ইন্টারেস্টিং মনে হলো।
শংকর
বাতিক, পাগলামি, এইসব নিয়েই তো। কৌরবেও এইসবই ছিল।
মণীন্দ্র
তাছাড়া জীবন কাটানো যায় না।
এক এক সময় মনে হয় অক্ষরের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে।
শংকর
হ্যাঁ, হ্যাঁ । এক এক সময় মনে হয় অক্ষরের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, অনেক কিছুই অক্ষর দিয়ে পুরোটা আমি বোঝাতে পারি না।
মণীন্দ্র
একটা কথা বলব? অক্ষরের সীমাবদ্ধতা আছে, আবার সেই সীমাবদ্ধতাকে কাজে লাগিয়ে ওপরে উঠা যেতে পারে। আমি একটা, শচীন দেবের একটা গান আছে না ‘মন দিলো না বধূ’?
শংকর
হ্যাঁ, হ্যাঁ, … মন নিলো যে শুধু।
মণীন্দ্র
হ্যাঁ। তাতে তবলা বাজিয়েছিলেন কি সাম নন্দী, খুব নাম করা। (রাধাকান্ত নন্দী, যিনি পরে মান্না দে’র সঙ্গত করতেন) বাজিয়েছেন প্রচুর। উনি কিরি-তে একটা শো করলেন। তো উনি করেছেন কী, একটা চ্যালাকাঠ, এই যা দিয়ে উনুন ধরানো হয়, সেই চ্যালাকাঠ বসিয়ে বসিয়ে এক যন্ত্র বানিয়ে ফেললেন। কিচ্ছু না, একেবারে, কী বলব, তাকে যন্ত্র না বলাই ভালো। এবং দেখিয়েছিলেন যে ওতে সা-রে-গা-মা-পা-ধা-নি-সা আসে। ওটা ঐভাবে উনি সেট করেছেন। ওঃ!
শংকর
ক্রিয়েটিভ মাইন্ড।
মণীন্দ্র
খুব ক্রিয়েটিভ। এবং তার ভেতরে একদম ঢুকে গেছেন। এবং বাজালেন। আমরা বুঝতে পারলাম উনি বাজাচ্ছেন একটা সুর, একটা গত্।
শংকর
আপনার নুড়ি বাঁদর উপন্যাসটা পড়ে ফেলেছি। দারুণ নতুন রকমের লেখা।
মণীন্দ্র
শিলাদিত্য পেয়েছ?
শংকর
হ্যাঁ। খুব সুন্দর লেখা। নতুন রকমের। ওই পাহাড়ি ছাগলগুলোর নাম ‘আইবেক্স’ নাকি? আমাদের দেশে ওর কোনো নাম নেই—পাহাড়ি ছাগল বলে হয়তো।
মণীন্দ্র
হ্যাঁ, পাহাড়ি ছাগল। ওর প্রায় সাত আটটা ভ্যারাইটি আছে, হিমালয়ে। আল্পসে আছে আবার অন্যরকম। একটু অন্যরকম।
শংকর
এদের আপনি সামনাসামনি দেখেছেন?
মণীন্দ্র
না, আমি পড়েছি।
শংকর
কিন্তু খুব সুন্দর ব্যবহার করেছেন।
মণীন্দ্র
খুব সুন্দর, আর ওরা দেখতে খুব সুন্দর। মানে, বাইরে থেকে সব ফটোগ্রাফাররা আসে, এসে ছবি তুলে নিয়ে যায়। আমরা খবর রাখি না, কিন্তু বাইরের লোকেরা এসে এসে করে যায়।
শংকর
হ্যাঁ হ্যাঁ, সেটাই তো। …তারপর স্নোলাইন নিয়ে লিখেছেন। যেখানে অর্কিড ফোটে। …পাহাড়ের এক একটা লেভেল নিয়ে বলেছেন।
শংকর
আচ্ছা, আপনি এখনও ছবি আঁকেন?
মণীন্দ্র
শেষ হয়ে গেছে। কিছু নেই।

শংকর
নানারকমের ইলাস্ট্রেশান আপনি করেছেন। বেশিটাই দেখেছি আমি অক্ষয় মালবেরি—বইতে।
মণীন্দ্র
সে তো শেষকালে, বুড়ো হয়ে গেছি যখন।
শংকর
‘মালবেরি’-তে সেগুলো কি সবই পেন্সিল স্কেচ?
মণীন্দ্র
না, এই কলমে… এই তো এখানে। এই কলম দিয়েই সব।
শংকর
রঙ দিয়ে করেছেন কখনো?
মণীন্দ্র
না, (মালবেরি-তে) কক্ষনো করি নি। কারণ তাতে অনেক খাটুনি। আর তাছাড়া রঙগুলোর কোয়ালিটি ভালো না। বেশি কাজ করি না তো, শুকিয়ে থাকে। একটু ভেজা ভেজা, মানে রঙটা নতুন থাকলে ভালো হয়।

শংকর
হ্যাঁ, ঠিক।
মণীন্দ্র
আচ্ছা তোমাকে ছবি দেখাই।
এখন বাচ্চাদের মতো করে ছবি আঁকার চেষ্টা করছি। ও অন্য রকম।
শংকর
হ্যাঁ, হ্যাঁ, দেখান তো।
(একটা ছোট্ট ডায়েরি এনে দেখালেন, পাতাগুলো রুলটানা, কর্কশ বাদামি, তার ওপর পাতায় পাতায় পোস্টকার্ড সাইজের ছবি সাঁটা। পঞ্চাশ ষাট বছর আগে আঁকা সব।)
মণীন্দ্র
রবীন্দ্রনাথ অনেকগুলো মেয়ের নাম রেখেছিলেন। ওর কবিতায় আছে, মহুয়াতে। বাইশ তেইশটা মেয়ে। উনি করেছেন কী, মেয়েদের এক একটা নাম দিয়েছেন, আর তাদের স্বভাব অনুযায়ী এক একটা কবিতা। তো আমি ভাবলাম যে ওদের ছবি আঁকি।
শংকর
এখানে কি বাইশটা ছবি আছে?
মণীন্দ্র
বাইশটা নেই। মানে, গোটা দশ বারোটা আছে। এক একটা এক এক রকমের।
শংকর
বাঃ। … আর এই ছবিগুলো?
মণীন্দ্র
এইগুলো আমি যখন দার্জিলিংয়ে। জায়গাটা টুং।
শংকর
মানে, ঘুম সোনাদা টু? সেইসব জায়গার স্মৃতি?
মণীন্দ্র
হ্যাঁ, ঐ সময়।
শংকর
বাঃ। সামনে বসে আঁকছেন তখন?
মণীন্দ্র
ঘরে বসেও দেখা যায়, জানলা খুললে। মেঘের মধ্যে বসে থাকা…।
শংকর
এই যে পোস্টকার্ড সাইজের, … এগুলো তো সব ওয়াশ ড্রয়িং।

মণীন্দ্র
হ্যাঁ। কাগজকে জলে ভিজিয়ে তার ওপর একটু একটু করে রঙ ফেলে…
শংকর
আচ্ছা আচ্ছা। বাঃ। নিজে এমনি ছবিও তুলতেন কি ক্যামেরায়?
মণীন্দ্র
না, একেবারে না। আমি পারি না। আমাকে নন্দলাল বলেছিলেন, … একবার গিয়েছিলাম ছবি আঁকা নিয়ে…
শংকর
নন্দলাল বসুর কাছে?
মণীন্দ্র
তো উনি আমাকে বললেন, ‘দেখো, তুমি যা বলছ তা হয় না।’ … আমি ওকে বলেছিলাম, রঙে আমি এই এফেক্টটা আনতে পারি কিনা, করতে পারি কিনা। বলল, ‘ওসব হয় না, আমি দেখো এতকাল ধরে চেষ্টা করছি, এখন বাচ্চাদের মতো করে ছবি আঁকার চেষ্টা করছি। ও অন্য রকম। তোমার হবে না এখন।’
শংকর
আচ্ছা, আমরা একটু আগে প্রকৃতির সৌন্দর্য নিয়ে বলছিলাম। কিছুটা মাইক্রো লেভেলে যে সিমেট্রি। …আমি সেদিন চিনির বড় কৃস্টালের কথা বলেছিলাম আপনাকে।
মণীন্দ্র
সুগার কিউব?
শংকর
না না, দোকানেই পাওয়া যায়। আমি নিয়ে আসব, দারুণ সুন্দর। ওই হলো ‘সেলফ অর্গানাইজিং অ্যান্ড পাটার্নিং সিস্টেম’। একদম সিমেট্রিক্যাল। সংখ্যার মধ্যেও কিন্তু এমন সৌন্দর্য রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতিতে ম্যাক্রো লেভেলে রয়েছে আন্সিমেট্রির সৌন্দর্যও ।

শংকর
এই তিনটে ছবি কোথায় এঁকেছিলেন?
মণীন্দ্র
এগুলো মধ্যপ্রদেশে, যখন শিক্ষকতার কাজে ছিলাম। বিলাসপুর থেকে সাইকেলে অল্প দূরেই, গ্রামীণ পরিবেশ। জায়গাটার নাম, কোনি। খুব সুন্দর তার আকাশ। আদিবাসী মেয়ে মাথায় ঝুড়িতে কলা নিয়ে হাটে যাচ্ছে, সেই ছবি।
কত যে আশ্চর্যে ভরা রহস্যময় তার মনোজগৎ, যা ব্যক্ত হয়েছে ছবিতে, কবিতায়।
শংকর
আর ওই যে ঝড়ের মুখে গাছ, ফিঙ্গে পাখি, সবুজের আঁকাবাঁকা দারুণ সব ডালপালা?
মণীন্দ্র
হ্যাঁ হ্যাঁ। যেমন জংগলের মধ্যে দেখবে একটা গাছ, তার কয়েকটা ডালপালা এমন বেঁকেচুরে রয়েছে যে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। … পদ্য মানে তো মিল, মিল, মিল।
শংকর
ঠিকই। ওই ভাঙচুরগুলো। ভেঙ্গে এমন একটা ডিস্টার্বান্স তৈরি করা যে একটা ঝংকার তৈরি হয়। সেই ঝংকারটা আমাদের ভালো লাগে, সেই ল্যাক অফ সিমেট্রি। যেটা আমরা, যখন আমরা পদ্যের অন্ত্যমিল থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। যখন একটা কথার পিঠে প্রচলিত কথা বা শব্দটা না এনে অন্য কথা আনি, হঠাৎ একটা দোলা লাগে। একটা অন্যরকম…।
মণীন্দ্র
হ্যাঁ, অন্যরকম। এবং ফর্মেশানও। … তো অনেক সময় মনে হয়, এর জন্যে অভ্যাসটাও দায়ী। ওই আনসিমেট্রিক্যালকে এনজয় করার জন্যেও একটা অভ্যাস থাকা দরকার—মনে হয়।
শংকর
হ্যাঁ ঠিকই। খুঁজতে হবে, নানাভাবে সৌন্দর্যকে …
মণীন্দ্র
হ্যাঁ, সৌন্দর্য রয়েছে অনেক ।
সত্যিই অনেক সৌন্দর্য আর কত যে আশ্চর্যে ভরা রহস্যময় তার মনোজগৎ, যা ব্যক্ত হয়েছে ছবিতে, কবিতায়। অনেক চিত্র, চিত্রকল্প, প্রকৃতি, উদ্ভিদ। রুপোর স্তম্ভের মতো নারী।
‘দেবী ও ভাস্কর’ নামক কবিতায় যেমন লিখেছেন—
‘অনেক দিন আগে, দৈবের বশে,
কলাভবনের ছাত্রী জয়া আপ্পাস্বামী রুপোর স্তম্ভের মতো
উল্লম্ব ইউক্যালিপটাস গাছেদের মধ্যে এসে
দাঁড়িয়ে ছিল।
সেই পুরোনো দিনের আশ্রমে কত যে আশ্চর্যের ব্যাপার ঘটে যেত।’
শংকর লাহিড়ী
শিক্ষা : শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়, কলকাতা। রিজিওনাল এঞ্জিনীয়ারিং কলেজ, দুর্গাপুর।
পেশা : পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। জামশেদপুরে টাটা স্টীল ইস্পাতপ্রকল্পে ৩৭-বছর কর্মজীবনের শেষে অবসরজীবনে এখন কলকাতায়।
প্রকাশিত বই :
কবিতা—
শরীরী কবিতা (১৯৯০, কৌরব প্রকাশনী)
মুখার্জী কুসুম (১৯৯৪, কৌরব)
উত্তরমালা, বেরিয়ে এসো প্লীজ (১৯৯৬, কৌরব)
বন্ধু রুমাল (২০০৪, কৌরব)
কালো কেটলি (নির্বাচিত কবিতা, ২০১২, ৯’য়া দশক প্রকাশনী)
সমুদ্রপৃষ্ঠাগুলো (কবিতাসমগ্র, ২০১৪, কৌরব)
গদ্য—
মোটরহোম (২০০৩, কৌরব)
কোরাল আলোর সিল্যুয়েট (নির্বাচিত গদ্য, ২০১২, কৌরব)
তথ্যচিত্র (রচনা, প্রযোজনা ও পরিচালনা) :
১. ‘রাখা হয়েছে কমলালেবু’
–কবি স্বদেশ সেনের সময়, জীবন ও কাব্যভাবনা নিয়ে ২০১৫ সালে নির্মিত ১২৭ মিনিটের তথ্যচিত্র।
২. দ্বিতীয় ছবি ‘উত্তরমালা, বেরিয়ে এসো প্লীজ’। কবিতাকে আশ্রয় করে, কবিদের নিয়ে, কবিদের জন্য ২০১৬ সালে নির্মিত ১৩২ মিনিটের তথ্যচিত্র। এতে অংশগ্রহণ করেছেন বাংলা ভাষার নয়জন নবীন ও প্রবীণ কবি, যাঁদের মধ্যে আছেন কবি মণীন্দ্র গুপ্ত, সমীর রায়চৌধুরী ও আলোক সরকার।
ই-মেইল : slahiri4u@gmail.com
Latest posts by শংকর লাহিড়ী (see all)
- অনস্তিত্বের কবি আলোক সরকার - October 1, 2017
- একুশ একটা বিষয় - June 20, 2017
- শংকর লাহিড়ীর অগ্রন্থিত কবিতাগুচ্ছ ‘অনন্ত সূত্রধর’ - May 18, 2017