
দৃশ্য; অদৃশ্য
❑
মানুষটি চায় খুব ভালো কিছু ঘটুক
তার জীবনে
সে অপেক্ষা করে সকাল; কিছু ঘটে না—যা সে
প্রত্যাশা করে।
সে অপেক্ষা করে দুপুর, আর অতিদূরে,
অন্যলোকে একটি গোলাপ ফোটে।
সে অপেক্ষা করে বিকেল; রাত্রিতে তার নিকট
একটি উজ্জ্বল ঘোড়া আসে।
ক্লান্ত মানুষ, অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে।
ঘরময় তখন শুধু গোলাপের গন্ধ….
শ্বেতপত্র-২
❑
আমি উড়ে গেলে দেয়াল ছড়িয়ে থাকে—
চারিদিকে পড়ে থাকে ডানা ও বেদনা,
বাগান পেরিয়ে পরি নেমে আসে ধীরে
এর মাঝে ভোরগুলি রয়েছে অজানা
পাথর গড়িয়ে নামে ধীর জলধারা
পাখি নই তবু—উড়াল আমারে টানে,
নিরাকার স্বর্গের দিকে উড়ে যাওয়া
মন, আজানের গায়ে নদী ক্ষয়ে চলে
কেন কাঁদে ভাষা, সেটা থাকুক গোপন
দুয়ারের ধারে এসে ফিরে গেছে রোদ,
ঘাসে পড়ে আছে রুপালি জামা এখন
আমার নাড়ির সাথে সদাই বিরোধ
মনের গহিনে নীল পাথর-সমাধি,
ফোটে তাতে কারো প্রিয় প্রাচীন করবী।
ঘুম অথবা খুন বিষয়ক
❑
বনভূমির ভেতর, সাঁকোর ওপর
সে থাকে দাঁড়ানো—
দেখে মনে হয় খুনী
অথবা আত্ম-খুন প্ররোচক;
সে আত্মহননের বার্তা প্রচার
করে লিফলেটে—
যেভাবে ফুল থেকেও ছড়ায়
পাপড়ি; মৃত্যুর ঘ্রাণ
সে প্রচার করে খুন
আর ঝুপ করে শব্দটা হয়—
গাছ-গাছালিতে কেউ
ডানা ঝাপটায়, আর ভীত চোখ;
ঝুপ করা আওয়াজ
নিজেও জানে না যে সে খুনী, আর
খুন-ই খুনের মূল
সাক্ষী, খুনীই তার বিচারক।
পৃথিবী থেকে দূরে
❑
জীবিত আর মৃতের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু? তোমাকে
বলতে চাই সেইসব সফরের কথা, যখন নদীতীরে কেবলই
সন্ধ্যে হয়ে আসছে। এই আসমান জমিনের সাক্ষী
আহ্নিক গতি, তার পাশে দাঁড়ানো ন্যাড়া গাছ। ডালপালার ফাঁক
দিয়ে ব্রহ্মাণ্ড আরও স্পষ্ট হয়ে এল…
দূর থেকে বাবার কাশির শব্দ। খুকখুক। মা যেন ঝাড়ু দিচ্ছে উঠোন।
আকাশে জ্বলজ্বল করছে কয়েকটি তারা।
ভোর্টেক্স
❑
পতন ঠিক ততক্ষণ, যতক্ষণ অক্ষত
থাকে অতল
এবং অতলও যদি ছিঁড়ে যায়,
একটি পতন ভাসে
ও ডোবে—
একটি বস্তু খুব উঁচু থেকে
পড়ছে
পড়ছে
পতনের নির্দিষ্ট কোনো সীমা নাই
পৃথিবীর ছাদ, কাগজের মতো ছিঁড়ে গেল
পৃথিবীর ছাদ, পত্রের মত টুকরো টুকরো
ঘাসে শুয়ে দেখি—উঁচু থেকে দেয়াল পতিত
ছন্দেরও পতন ঘটে, ঘটে উল্কার
আর মানুষের পতন, শুরু তার ছায়ার দিকে
যেভাবে ধাতবখণ্ড পতিত হয়
—অন্ধকূপে
এবং যেতে যেতে মানুষ, খনিজ,
মানুষ, কাঠ কয়লা
মানুষ দেয়াল
মানুষও ছায়া
গ্রহের অভ্যন্তরে
(২য়) ত
কতক মানুষ ছিটকে যায়
কতক মানুষ চলে সুড়ঙ্গে
কতক মানুষের পতন, অন্য গ্রহে
বিস্তীর্ণ খামারের রাত, বিরাটকায় চাঁদ
আর মৃত প্রজাপতির ওপর
(চাঁদের নাম জানা নাই)
চুল উড়ছে
চারিদিকে হলদে খেত, গাঢ় বাতাস
চারিদিকে হলদে খেত, গাঢ় বাতাস
ভেসে এল স্মৃতিতে; আবছা।
উল্কা
❑
কামনাকে নিয়ে আমার কোনো ব্যক্তিগত চিঠি নেই। প্রতিবার মাস্টারবেট করার সময় ভাবি আত্মজ আয়নায় জন্মানো ফুলগুলোর কথা। কিন্তু তুমি জানো না—আত্মার গভীরে আত্মা ঠিক কিভাবে কাঁদে; আর বরফ ভেঙে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয় নদী। মৃত্যু কি গোলাপি আগুন, নাকি এক নিখোঁজ নক্ষত্রের ছায়া? পৃথিবীর সব পাপ, সব পুণ্য আমি পৃথিবীতে রেখে যাব। এমনকি আমার বীর্যও—সৌন্দর্যকে ভেবে ভেবে যারা বহুকাল ক্ষরিত হয়েছিল।
একালের রূপকথা
❑
শহরে এক জাদুকর এলে তার বাঁশির সুরে শহরের মানুষের বুক খুলে যায়; বের হয়ে পড়ে অন্তরাত্মা। জাদুকর জাদু দেখায় না—সে বাঁশিতে আবারো ফুঁ দেয়, আর অতিদূর থেকে সারস উড়ে যায়। এরপর সে হাঁটে, হাঁটতে থাকে নদীর দিকে, তার পিছে হাঁটে আত্মারাও, আর জাদুকর হাঁটে—নদীর জলে ওদের ডুবিয়ে দেবে বলে। অথচ আত্মারা হাঁটতে হাঁটতে নিজেদের মধ্যে ডুবে যায় আর নদীর জলে কিছু গোলাপ ভেসে ওঠে।
কুশল ইশতিয়াক
প্রকাশিত বই :
কবিতা—
উইপোকার স্বপ্নের ভেতর [চৈতন্য, ২০১৬]
জোছনাঘর [আগুনমুখা, ২০১৫]
ই-মেইল : kushalistiaque@gmail.com
Latest posts by কুশল ইশতিয়াক (see all)
- আয়নার ওপাশে মেঘ - May 30, 2017
- কুশল ইশতিয়াকের কবিতা - December 23, 2016
- কুশল ইশতিয়াকের সাতটি কবিতা - August 24, 2016